ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে সক্রিয় হওয়ার এবং মশার বংশবিস্তার রোধে বাড়ি, কর্মস্থল ও আশপাশের এলাকা পরিস্কার রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সবাইকে আহ্বান করব- নিজের ঘরবাড়ি ও আশপাশের রাস্তাঘাট যেন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সবাই যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে এখান থেকে রক্ষা পেতে পারব।
বিএসটিআই নিবন্ধিত পাস্তুরিত দুধে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকার অভিযোগের পেছনে আমদানিকারকদের কারসাজি আছে কি না- এমন সন্দেহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার দুধের খামার করে গ্রামের মানুষকে স্বনির্ভর হতে উৎসাহিত করছে। পাশাপাশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্যপণ্য রফতানিতে জোর দিচ্ছে। তখনই হঠাৎ একেকটা তথ্য দিয়ে দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচির পথে কেন বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে? এখানে মনে হচ্ছে, আমদানিকারকদের কোনো কারসাজি আছে কি না বা তারা কোনোভাবে উৎসাহিত করছেন কি না। এটাও খতিয়ে দেখা উচিত।
মঙ্গলবার লন্ডন থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিশেষ জরুরি বৈঠকে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ডেঙ্গু মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই বিশেষ জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকের শুরুতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মোবাইল ফোনে কল করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় টেলিকনফারেন্সটি মাইকে সংযোগ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের শোনানো হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ইদানীং একটি উপদ্রব দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গু জ্বরটা যখন শুরু হয়, তখন দেখেছি, বিশেষ করে শহর এলাকায় এবং ঢাকা শহরে এর বিস্তার ছিল। তবে এটা ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদের সময় মানুষ বাড়িতে যাবে। এ জন্য সবাইকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সবার নিজ নিজ ঘরবাড়ি এবং কাপড়চোপড়, যেগুলো আলনায় ঝোলানো থাকে ও বাপে কিংবা আলমারিতে থাকে সেগুলো পরিস্কার রাখতে হবে। ঘরের সব কোণা ও সবকিছু পরিস্কার রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এডিস মশা বংশ বিস্তার করে জমে থাকা পরিস্কার পানিতে। সে কারণে বৃষ্টির পানি যেন কোথাও জমে না থাকে সে বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে। আর এডিস মশা বেশিরভাগ সময় পায়ের দিকে কামড়ায়। সে কারণে পা ঢেকে রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে।
ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনকে আহ্বান জানাব- সব নেতাকর্মী যেন মাঠে নেমে পড়েন। ছাত্র, শিক্ষক ও পেশাজীবী থেকে শুরু করে সব ধরনের সংগঠনকেও সংশ্নিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিরাময়ে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির কাজেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঘরবাড়ি, অফিস, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোথাও যেন এয়ারকন্ডিশন, ফ্রিজ এবং ফুলের টব কিংবা ফুলদানির পানিসহ টায়ার ও ভাঙা হাঁড়িতে পানি জমে না থাকতে পারে। সবাইকে এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর দেওয়া দরকার।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকার দুই সিটি মেয়রের সঙ্গে কথা বলে নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে বলব- মশা যেন ডিম পাড়তে না পারে। মশার লার্ভা যেন তৈরি না হয়। বংশ বিস্তার করতে না পারে। এটি প্রত্যেক মানুষকে নিজেকেই করতে হবে। এটাই বাস্তবতা।
সাংবাদিকদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হয়। সেজন্য নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে, যেন সবাই সাবধান থাকেন। কর্মস্থলেও মশা যেন কামড়াতে না পারে, বংশ বিস্তার করতে না পারে।
‘গুজবে কান নয়’: টেলিকনফারেন্সে পদ্মা সেতুতে ‘মানুষের মাথা লাগার গুজব’ ও গণপিটুনি ইস্যুতেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশবাসীকে বলব গুজবে কান দেবেন না। কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশের হাতে তুলে দিন। গুজব ও গণপিটুনির নামে মানুষ হত্যা জঘন্ন অপরাধ ও পাপের কাজ। মিডিয়ায় যারা আছেন তাদেরও বলব, অহেতুক ভুল তথ্য ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।
গুজব ও ভুল তথ্য প্রচারকারী এবং গণপিটুনিতে জড়িতদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যা করে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। গুজব ও মিথ্যা তথ্য যারা ছড়াবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘বন্যা মোকাবেলায় কাজ করছে সরকার’ : বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগোলিক কারণে এ দেশে বিভিন্ন সময় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়। বর্তমানে বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এই বন্যা মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্য দায়িত্বশীলরা কাজ করছেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাদের বন্যাকবলিতদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।
পাস্তুরিত দুধ ইস্যু: আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, লক্ষ্য করলাম হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই দুধ পরীক্ষা করে একজন প্রফেসর সাহেব বলে দিলেন, দুধ ব্যবহারযোগ্য নয়। এই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে সঙ্গে সঙ্গে আদালতে রিট হলো। এ কারণে বলে দেওয়া হলো পাঁচ সপ্তাহ দুধ ব্যবহার করা যাবে না কিংবা পাস্তুরিত করা যাবে না! একে একে সব কোম্পানির দুধ উৎপাদন বন্ধ।
দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নিয়ে গুজব ছড়িয়ে রফতানি কাজে সমস্যা সৃষ্টি করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যারা এই বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত দেন, তাদেরও ভেবে দেখা উচিত যে হঠাৎ একটা কথা বলে গুজব ছড়ালে রফতানি কাজে সমস্যা সৃষ্টি করা হয়। দেশের মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই আতঙ্ক সৃষ্টি করা কিংবা দেশে উৎপাদিত পণ্যের মান সম্পর্কে কথা বললে দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়।