fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িজাতীয়বিতর্কের মুখে কাজ বন্ধ 'মুজিব ভাস্কর্য' প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা যেমন

বিতর্কের মুখে কাজ বন্ধ ‘মুজিব ভাস্কর্য’ প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা যেমন

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তি ও বিরোধিতার মুখে ঢাকার ধোলাইপাড়ে ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ স্থগিত থাকলেও এটি বাতিল হয়নি আবার নিয়মমাফিক অনুমোদন প্রক্রিয়াটিও শেষ হয়নি বলে জানা গেছে।

শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বছরে ভাস্কর্যটি উদ্বোধনের কথা ছিল। বিতর্কের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তীর বছর শেষেও ভাস্কর্যটি স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

দুই হাজার কুড়ি সালে মুজিব ভাস্কর্যটি স্থাপন নিয়ে হেফাজতে ইসলাম ও সরকারি দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

ওই বছর ডিসেম্বর মাসে ভাস্কর্যটি উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। একই বছর চীন থেকে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করে বাংলাদেশে আনা হয়।

‘মুজিব ভাস্কর্য’ স্থাপনের জন্য ঢাকার দক্ষিণে ধোলাইপাড় এলাকায় স্থান নির্বাচন করা হয়। জায়গাটি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের প্রান্তে রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখে। আলোচিত ভাস্কর্যটি স্থাপনের জন্য পূর্ব নির্ধারিত জায়গাটিতে গিয়ে দেখা যায় সেটি এখনো ঘিরে রাখা হয়েছে। বৃত্তাকার জায়গাটির কেন্দ্রে মূল ভাস্কর্য বসানোর জন্য বেদি নির্মান শেষ করা হয়েছে।

তবে শেষ পর্যন্ত ওই জায়গায় পূর্ব নির্ধারিত ‘মুজিব ভাস্কর্য’ হবে কিনা সেটি কেউ নিশ্চিত করে বলেতে পারেননি। সেখানে ভিন্ন কোনো ভাস্কর্য স্থাপন হবে কিনা সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো ঘোষণা নেই।

ভাস্কর্যটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের যে প্রকল্পের অধীনে বাস্তবায়নের কথা ছিল তার প্রকল্প পরিচালক সবুজ উদ্দিন খান বিষয়টিকে ‘স্পর্শকাতর’ উল্লেখ করে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি। তবে তিনি গণমাধ্যমকে  জানিয়েছেন, ‘ভাস্কর্যটি মূল প্রকল্প থেকে এখনো বাদ দেয়া হয়নি।’

বর্তমানে বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ভাস্কর্য স্থাপন করতে হলে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদন নিতে হয়। মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষে জানানো হয়েছে আলোচিত ওই ভাস্কর্য স্থাপনের কোনো আবেদন তাদের কাছে করা হয়নি।

এ ব্যাপারে ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ট্রাস্টের কাছ থেকে নকশার অনুমোদন ছাড়া দেশের কোথাও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা যাবে না।

“জাতির জনকের কোনো ভাস্কর্য করতে হলে এখানে (ট্রাস্টে) আবেদন করতে হবে। বাছাই কমিটিতে বাছাই হবে। তারপরে মূল কমিটি যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যিনি এই ট্রাস্টের সভাপতি সেখানে একটা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আমার জানামতে এখানে আমি কোনো আবেদন এখনো দেখি না।”

মি. ইসলাম বলেন, “যখন তারা হয়তো প্রস্তুত হবে বা ওরকম কোনো কিছু তৈরি করবে তখন হয়তো তারা অনুমোদনের জন্য আবেদন দিতে পারে। অনুমোদনের বিষয়টিতো পরের ব্যাপার। আমার জানামতে আবেদনপত্রটাই এখনো ট্রাস্টের কাছে পৌঁছায়নি।”

দুই হাজার কুড়ি সালে ধোলাইপাড়ের মুজিব ভাস্কর্যে বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম এবং ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দল ও সংগঠন যখন আন্দোলনের ডাক দেয় এর বিপরীতে রাজপথে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং সমমনা সামাজিক সংগঠন। সরকারি আমলারাও কর্মসূচী পালন করেছিল ভাস্কর্য স্থাপনের পক্ষে অবস্থান নেয়।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম ভাস্কর্য স্থাপনের ব্যাপারে বলেন বিলম্ব হলেও ভাস্কর্যটি হবে বলেই তারা বিশ্বাস করেন।

“জাতির পিতার মুর‍্যাল যেটা হওয়ার যে পরিকল্পনা সেটা অবশ্যই হবে। এটার যে কার্যক্রম দ্রুতগতিতে হবার কথা ছিল সে কাজটি হতে পারেনি। এ বিষয়টির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আছে। সেই দৃষ্টিকোন থেকেই আমরা বলতে চাচ্ছি যথাশীঘ্র এই কাজটি শুরু হবে এবং এই জাতির পিতার ম্যুরাল তৈরি হবে এবং এ বিষয়টি নিয়ে সংশয় প্রকাশের অথবা দ্বিধা দ্বন্দ্বের কোনো অবকাশ আছে বলে আমরা মনে করি না।”

শেখ মুজিবের জন্ম শতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তীর বছরে মুজিব ভাস্কর্য স্থাপনের একটি ভিন্ন তাৎপর্য ছিল বলে অনেকে মনে করেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, পরিস্থিতির আলোকেই সরকারকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

“আমাদের দেশের ধর্ম, আমাদের দেশের সংস্কৃতি, আমাদের দেশের মানুষের সেন্টিমেন্ট সেটারও একটা সংযোগ রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জোর করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। আবার বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর বা তাদের মতের পরে নির্ভর করে কোনো ভাল কাজকে বন্ধ করে দেয়া সেটাও ঠিক হবে না।”

মুজিব ভাস্কর্যটি স্থাপনে প্রকল্প কাজের তত্ত্বাবধানে ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জানা যায় ধোলাইপাড়ে এ জায়গায় স্থাপনের জন্য চীন থেকে ভাস্কর্য নির্মাণ করে দেশে আনা হয়েছে। ভাস্কর্যটি বানাতে খরচ হয়েছে ৯ কোটি টাকা।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments