যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের আপস্টেটের দুটি কাউন্টিতে পোলিও শনাক্ত হয়েছে। এতে করে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে দেশটির সেন্ট্রাল ফর ডিজিস কন্ট্রোল (সিডিসি)।
চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রথমে রকল্যান্ড কাউন্টিতে পোলিও রোগীর সন্ধান পাওয়ার কথা প্রকাশিত হয়। এরপর পাশের অরেঞ্জ কাউন্টিতেও রোগটির জীবাণু ছড়িয়েছে বলে জানা যায়। পরিস্থিতি এমন যে পানি ও সুয়ারেজ লাইনেও পোলিও’র জীবাণু পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪০-এর দশকে বছরে গড়ে ৩৫ হাজার মানুষ পোলিওতে আক্রান্ত হতো। ১৯৫৫ সালে শিশুদের মধ্যে চার ডোজের টিকা দেওয়ার জোরদার কর্মসূচি শুরু হয় সে দেশে।
ফলে ১৯৭৯ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রোগটি পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যায়। তবে আবারও রোগটির ফিরে আসার পেছনে কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো দেশটির কিছু কিছু জায়গায় মানুষ টিকা নিতে চায় না। ধর্মীয় কারণের সঙ্গে সাম্প্রতিক কিছু রাজনৈতিক বিষয় যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে।
প্রায় দেড় দশক ধরে নিউ ইয়র্কে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডা. প্রতাপ দাস। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, করোনাভাইরাসের প্রচণ্ড প্রকোপের মধ্যেও একটা শ্রেণির মানুষকে টিকা নিতে দেখা যায়নি সে দেশে। পোলিও ছড়ানোর পেছনেও টিকা না নেওয়াই কারণ।
এ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পোলিওর টিকা পরীক্ষিত এবং ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর। ফলে শুধু টিকা দেওয়া নিশ্চিত করা গেলেই এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়ভাবে টিকা নেওয়ার হার যেখানে ৯৩ শতাংশ। সেখানে রকল্যান্ড ও অরেঞ্জ কাউন্টির প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ টিকা নিয়েছে। এমন চিত্র রয়েছে দেশটির অনেক জায়গাতেই। যার কারণে ভবিষ্যতে আরো সংকটের শঙ্কা রয়েই গেছে।
পোলিওর কারণে শুধু নিউ ইয়র্ক নয়, যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে সিডিসি। নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এই মুুহূর্তে সংকট মোকাবেলার জন্য নানা উপায় খুঁজছে সিডিসি। আক্রান্ত এলাকায় খোলা হয়েছে বিশেষ টিকা কেন্দ্র। শিশুদের অতিরিক্ত একটি ডোজ দেওয়া হচ্ছে।
ডা. প্রতাপ দাস বলছেন, পোলিওতে আক্রান্ত চারজনের মধ্যে তিনজনেরই কোনো ধরনের উপসর্গ থাকে না। এর পরও তারা রোগটি ছড়িয়ে দিতে পারে।
আর এখানেই ভয় দেখছেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, পোলিওর লক্ষণ গলা ব্যথা ও মাথা ব্যথা অন্য রোগের উপসর্গের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার ঝুঁকি থাকে। আক্রান্ত প্রতি ২০০ জনের মধ্যে শুধু একজন পঙ্গুত্ব বরণের ঝুঁকিতে থাকে। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ শ্বাস নিতে না পেরে মারা যায়।
নিউ ইয়র্কের একটি হাই স্কুলের শিক্ষক শেখ আল মামুন বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমেরিকায়ও কভিড-১৯-এর ধকল এখনো কাটেনি। তার ওপর মাংকিপক্স ভীতি ছড়াচ্ছে। মিশিগান আর ওহাইওতে মিলেছে ই-কোলাই ভাইরাসের দেখা। এমন পরিস্থিতিতে ছুটি কাটিয়ে সেপ্টেম্বরে শিক্ষার্থীরা ফিরবে স্কুলে। এরই মধ্যে কিছু স্টেটে স্কুল খুলেও গেছে। ফলে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সংকট সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।