fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িসারাদেশরাজশাহীশিক্ষার্থীদের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ

শিক্ষার্থীদের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ

বিদ্যালয়ের বাচ্চারা কথা শুনছে না। বেপরোয়া আচরণ করছে। শিক্ষকদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়, তা যেন ভুলেই গেছে। আবার সহপাঠীদের সঙ্গেও এমন খারাপ ব্যবহার করছে, যেটা অমানবিক।

বিদ্যালয়ে আসার নামে বাইরে আড্ডা দিচ্ছে। ক্লাসের সময় শিক্ষার্থীদের আড্ডা দেওয়ার কারণে রাজশাহী কলেজের ঐতিহ্যবাহী একটি ক্যানটিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী বহিষ্কারের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বিকল্প পদ্ধতিতে তাদের ক্লাসমুখী করা ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন আর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাচ্চা হিসেবে গণ্য করলে চলবে না। তাদের ব্যক্তি হিসেবে দেখতে হবে। শিক্ষকদের তাদের সামনে মডেল বা আদর্শ হয়ে উঠতে হবে। এটা না হলে আজকের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের মানবে না।

পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে ১০ আগস্ট রাজশাহী নগরের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলেজিয়েট স্কুলের ছয় শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বিদ্যালয়ে না আসার নোটিশ জারি করা হয়েছে। ছয়জনের নোটিশ অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। আরও একজনের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারটা শুধু নোটিশ বোর্ডে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও একই ধরনের আচরণ করছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের গায়ে এখন আর হাত তোলা যায় না।

রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের যে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের দুজন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা বিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে ধূমপান করেছে। বাকিদের তিনজন চতুর্থ শ্রেণির ও একজন পঞ্চম শ্রেণির। এরা চরম ডানপিটে। একজন শিক্ষার্থীকে এত অমানবিকভাবে পিটিয়েছে যে কোনোভাবে তার চোখটা বেঁচে গেছে। এরা শিক্ষকদের কোনো শাসনই মানে না। এদের নোটিশ অনলাইনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নবম শ্রেণির আরও এক শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন আচরণ করেছে, যা প্রকাশযোগ্য নয়। বাধ্য হয়ে তাকেও ছয় মাসের জন্য বিদ্যালয়ে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষার সময় এসে শুধু পরীক্ষা দেবে। তবে তার নোটিশ অনলাইনে দেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নূর জাহান বেগম প্রথম আলোকে বলেন, এর আগেও এই বিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে এ ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বিদ্যালয়ে প্রায় ১২ জন শিক্ষার্থীকে এই শাস্তির আওতায় রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, একে তো করোনার বন্ধের কারণে বাচ্চাদের মধ্যে একাডেমিক আচরণ গড়ে ওঠেনি। আরেক দিকে তাদের শাসন করার সুযোগ না থাকায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যতই খারাপ আচরণ করুক, এখন একটা বাচ্চাকে থাপ্পড়ও দেওয়া যায় না। শুধু এই বিদ্যালয়ই নয়, সব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একই রকম আচরণগত পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তানজির আহম্মদ মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য কাউন্সেলিং করেন। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার ও সমাজে এই সংকট তৈরি হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে, তাঁদের দ্বিমুখী নীতি (ডাবল স্ট্যান্ডার্ড) থাকলে চলবে না। শিক্ষক যদি বলেন, তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়তে হবে, না পড়লে নম্বর দেওয়া হবে না। এই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে উঠতে পারবেন না। তাঁকে তারা মানবে না। বাবা-মায়ের ক্ষেত্রেও তা-ই।

অধ্যাপক তানজির আহম্মদ আরও বলেন, ছোট বাচ্চার হাতেই এখন বাবা-মা স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন। পরে তারা নবম-দশম শ্রেণিতে উঠে প্রেম করছে। তখন অভিভাবকেরা তার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিচ্ছেন। তা তো হবে না। বাবা-মাকেও এই দ্বৈতনীতি ত্যাগ করতে হবে। তা ছাড়া তাদের কথাও সন্তানেরা শুনবে না। এভাবে উভয় দিক থেকেই সংকট তৈরি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘করোনার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে, এটা ঠিক কিন্তু এখনকার বাচ্চারা আমাদের চেয়ে বেশি স্মার্ট। বেশি জানে। শিক্ষকেরা তাদের মডেল বা আদর্শ হয়ে উঠতে না পারলে তাঁদের শাসনে আর কাজ হবে না। শিক্ষার্থীরা মানবে না। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ঠিক সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে আর গায়ে হাত তোলার প্রয়োজন হবে না। বিদেশে তো তা-ই করা হয়। বাচ্চারা কথা শোনে। আর ১-২ শতাংশ দুষ্টু বাচ্চা থাকতেই পারে। এটা আগেও ছিল, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments