ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা দিয়ে তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন নগরের লালখান বাজার এলাকা। নিজের ব্যক্তিগত অফিস ও বাসায় বসে মনিটরে দেখভাল করতেন। এ কারণে নগর ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলায় নাম আসলেও তাঁকে ধরতে যায়নি পুলিশ। পুলিশসহ কেউ এলাকায় ঢুকলেই খবর পেয়ে যেতেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম।
২৩ দিন পর ঢাকার বনানী থেকে গত রোববার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অথচ গত ১২ জুলাই এক ছাত্রলীগ নেতার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে প্রথমবারের মতো সুদীপ্ত হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে দিদারুলের নাম আসে।
জানতে চাইলে সুদীপ্ত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ঝামেলা এড়াতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে সুদীপ্ত হত্যাসহ অস্ত্রের বিষয়ে তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।
সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দিদারুল এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাখতেন কি না, জানতে চাইলে নগরের খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, এখন কমবেশি সবাই সিসি ক্যামেরা লাগায় বাসার আশপাশে। কে কী উদ্দেশ্য লাগায় সেটি বলা মুশকিল।
১৯৯৭-৯৮ সালে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন দিদারুল। ওই সময় তিনি প্রয়াত আ.লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে ছিলেন। ২০১৪ সালে বলয় পরিবর্তন করায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত তিনি।
নগরের লালখান বাজার এলাকার কেব্ল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ী আবুল খায়েরের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে দিদারুল ব্যবসাটি চালিয়ে যাচ্ছেন। ভয়ে তিনি মুখ খোলেননি। জানতে চাইলে গতকাল বিকেলে আবুল খায়ের বলেন, ‘ঝামেলায় যেতে চাই না। এখন এগুলো বলে কী হবে?’
নতুন বাড়ি নির্মাণ, কাঁচাবাজার থেকে চাঁদাবাজিসহ লোকজনকে জিম্মি করে রাখলেও কেউ ভয়ে মুখ খোলেন না। সর্বশেষ গত ২২ জুলাই লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ এফ কবির মানিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে বিদেশে পালিয়ে থাকলেও ফিরে এসে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছেন দিদারুল।
যেই তাঁর পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় তাঁকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের অথবা হামলার শিকার হতে হয়। লালখান বাজার এলাকায় জনমনে ভীতি সঞ্চার করতে নিজের কাছে থাকা দুটি বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করতেন। কথায় কথায় গুলি ছোড়াই তাঁর নেশা। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করা হয়। ৩১ জুলাই স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় বাতিলের আদেশ দেওয়ার পর পুলিশ অস্ত্র দুটি জব্দ করে।
সুদীপ্ত হত্যা মামলায় গতকাল দিদারুলকে কারাগারে পাঠান আদালত। দিদারুলের বাবা আবদুল হক বলেন, আগামী নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবে তাঁর ছেলে দিদারুল। এ কারণে কাউন্সিলর মানিক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাঁর ছেলের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করিয়েছেন। সুদীপ্ত হত্যার বিষয়ে কিছু না জানলেও মিথ্যা জবানবন্দি দিয়ে তাঁর ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। ছেলের একটাই অপরাধ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। চাঁদাবাজি, জায়গা দখল কিংবা খুনের কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় তাঁর ছেলে।