বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বাগেরহাটের সব নদীর পানি বিপদ সীমার দেড় ফুট উপরে প্রবাহিত হওয়ায় জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাট শহর, মোংলা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর, কচুয়া, চিতলমারী ও শরণখোলা উপজেলার নিন্মায়াঞ্চেলে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জলোচ্ছ্বাসে কয়েক হাজার মাছের খামার ও পুকুর পানিতে তলিয়ে মাছ ভেঁসে গেছে।
মোরেলগঞ্জ বাজারসহ ফেরিঘাট থেকে পুরনো থানা ঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে হু-হু করে পানি ঢুকছে।
অনেক দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত রয়েছে। সদরের বারুইপাড়া ইউনিয়নের বাকপুরায় পানি উন্নয়ন বের্ডের রিংবাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে এবার তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। সুন্দরবনের সব থেকে উঁচু এলাকা চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রটিও প্রায় ৪ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
তবে, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণীরা এখনো নিরাপদ রয়েছে। এখন পর্যটনসহ সব ধরনের বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় এত উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের পানির তোড়ে সুন্দরবনের বাঘ হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ভাগ্যে কী ঘটেছে বা কেমন আছে তা নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে জানা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় গোটা সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীরা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল ওঠায় শনিবার রাত থেকে সাগরে ফের ইলিশ আহরণ বন্ধ হয়ে গেছে। তিন নম্বর সংকেতের মধ্যে উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে কয়েক হাজার ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের ছোট নদী-খাল ও বাগেরহাটের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
সুন্দরবনের দুবলা জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে দ্বিতীয় দিন সোমবার দিনভর অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে মোংলা বন্দরে পন্য ওঠানামার কাজ ব্যহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
শরণখোলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন জানান, বঙ্গোপসাগর অশান্ত হয়ে ওঠায় বাগেরহাট জেলার প্রায় ১৩ হাজার জেলে ফিশিং ট্রলার নিয়ে সাগর ছেড়ে এখন সুন্দরবনসহ উপকূলের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে অবস্থান করছে। শরণখোলার শতাধিক ট্রলার সুন্দরবন ও উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় নিরপাদ আশ্রয় নিয়েছে। ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই ৬৫ দিনের অবরোধ গেলো। এর পরে সামনে অক্টোবরে আসছে ২২দিনের অবরোধ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এনিয়ে মাত্র এক মাসের মধ্যে সাগর তিনবার অশান্ত হলো। এতে ইলিশি মৌসুমের পাঁচ মাসের অর্ধেক সময় চলে যায় অবরোধ আর দুর্যোগে। যার ফলে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা লোকসানে পড়তে হচ্ছে জেলে-মহাজনদের। লোকসানে পড়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে অনেকে পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। তাই জেলে-মহাজনদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে অক্টাবরে ২২ দিনের অবরোধ বাতিলের দাবি জানান এই মৎস্যজীবী নেতা।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার মো. আজাদ কবির জানান, কেন্দ্রটিতে সোমবার পানি আরো বেড়েছে। সোমবার দুপুরে ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রটি পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
এতে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের রাস্তঘাটসহ বন্যপ্রাণী রাখার সেডেও পানি ঢুকে পড়েছে। এই অবস্থায় পর্যটন মৌসুমের ১০ দিনের মাথায় পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে এই কেন্দ্রটি। তবে, এখনো করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণী হরিণ, কুমির ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা নিরাপদ রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কয়েক শত ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন ছোট খালে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়ে থাকা এসব ট্রলার ও জেলেদের নিরাপত্তার জন্য বনরক্ষীরা নিয়োজিত রয়েছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, পূর্ণিমার প্রভাবে জেলার নদ-নদীর পানি বিপদসীমার দেড় ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সদরের বারুইপাড়া ইউনিয়নের বাকপুরায় পানি উন্নয়ন বের্ডের রিংবাঁধ ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এছাড়া বেড়িবাঁধের বাইরে থাকায় জেলার শতাধিক গ্রামের বিভিন্ন এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় জোয়ারের পানি সহজে লোকালয়ে প্রবেশ করছে কয়েক শত বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।