নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যে বাজারে ক্রেতাসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল পেঁয়াজ। সেই পেঁয়াজও ঝাঁজ ছড়াতে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের খুচরা ও পাইকারি উভয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
রাজধানীর বাজারগুলোয় খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।একইভাবে হিলি বন্দরেও কেজিতে আট থেকে ১০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দর থেকে রাজধানীতে পেঁয়াজ পৌঁছানোর পর খুচরা পর্যায়ে দাম আরো বাড়বে। অন্যদিকে বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম আরো বেড়েছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় মুরগির দাম বাড়ছে। তবে নতুন করে বাড়েনি ডিম, চাল, মাছ ও সবজির দাম।হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বাজারে এসে ক্রেতারা বিপাকে পড়ছেন। তাঁরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই। তার পরও কেজিতে ১০ টাকা বাড়ানো হলো কেন? নিশ্চয় কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। আর বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কারসাজি আছে কি না তা তদন্ত করে দেখতে হবে।
১৩ অক্টোবর রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা ও বাড্ডা বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, গত সপ্তাহে যা ছিল ৪০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সোনালি ও দেশি মুরগি।সপ্তাহের ব্যবধানে অন্য নিত্যপণ্যের দামে তেমন হেরফের হয়নি। আগের বাড়তি দামেই আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, দেশি রসুন ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, খোলা আটা কেজি ৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ১২৫ টাকা, মোটা ব্রি ২৮ চাল কেজি ৬০ টাকা, চিকন চাল কেজি ৭৫ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।চিকন মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। আলু কেজি ৩০ টাকা। ডিম আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।
‘গত দুই-তিন দিন ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। বর্তমানে পাইকারিতে পেঁয়াজ কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আর খুচরায় ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের বস্তা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ‘দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে গত তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে আট থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ফলে বর্তমানে পাইকারিতে ইন্দোরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি, আর নাসিকের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি। আগে বন্দরে ইন্দোর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ২২ থেকে ২৪ টাকা এবং নাসিকের পেঁয়াজ ২৭ থেকে ২৮ টাকা কেজি।
ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকাগুলোয় বন্যা হওয়ায় সেখানে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ভারতের মোকামগুলোয় পেঁয়াজ সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে আমাদের কেজিপ্রতি আট থেকে ১০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ। আমদানি পর্যায়ে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও দাম বাড়ছে। ‘বাজারে মাঝারি আকারের প্রতি কেজি তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। মাঝারি আকারের পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৮০ টাকা। এক কেজি ওজনের রুই বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, দেড়-দুই কেজি ওজনের রুই বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা। বড় রুই বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। বড় আকারের কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা। কাঁচকি কেজি ৪০০ টাকা, চাষের কই ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, ছোট আকারের পাবদা কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বড় আকারের পাবদা ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি। গোল বেগুন ১০০ টাকা কেজি, লম্বা বেগুন কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, পটোল, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ছোট আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি পিস ৫০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা কেজি, পাকা টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা কেজি। লাউ আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।