তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানের চলমান বিক্ষোভে শুধু গত মাসেই প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৩ শিশু। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ১৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ কথা বলেছে।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিক্ষোভ দমনের সময় শুধু সেপ্টেম্বরের শেষ ১০ দিনেই নিরাপত্তা বাহিনীর হাত অন্তত ২৩টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে কারো কারো বয়স মাত্র ১১ বছর।মধ্য সেপ্টেম্বরে পুলিশি হেফাজতে ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর পর রাস্তায় নেমে আসে ইরানের জনসাধারণ। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সেই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল ইসলামী শাসকগোষ্ঠী এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে শুরু থেকেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে বিক্ষোভকারীদের।
এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইরানি কর্তৃপক্ষের এই দমন-পীড়নকে ‘নৃশংস’ বলে অভিহিত করেছে। তাদের কথা, ‘রাজনৈতিক শোষণ এবং বৈষম্যমুক্ত একটি ভবিষ্যতের জন্য রাস্তায় নেমে আসা শিশু প্রতিবাদকারীদের ওপর সর্বশক্তিতে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। ’অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিহত শিশুদের মধ্যে ২০ জন ছেলে (বয়স ১১ থেকে ১৭) এবং তিনজন মেয়ে, যাদের মধ্যে দুজনের বয়স ১৬ ও ১৭। নিহত শিশুদের অর্ধেকের বেশি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর এবং তারা ৩০ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো আক্রমণে নিহত হয়েছে। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি আরো বলেছে, দেশের তরুণদের চেতনাকে প্রতিরোধ করতে এবং ক্ষমতায় নিজের বজ্রমুষ্ঠি অটুট রাখতে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী সম্পূর্ণ দায়মুক্তভাবে অন্তত ২৩ জন শিশুকে হত্যা করেছে। আরো অনেককে আহত করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর হাত নিহত শিশুর প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি এবং এ নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনটিতে চলতি অক্টোবরে এ পর্যন্ত নিহত শিশুদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অসলোভিত্তিক কুর্দিশ মানবাধিকার সংগঠন হেনগউ জানিয়েছে, গত রবিবারও নিরাপত্তা বাহিনীর হাত সাত বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।ইরানের মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী হাসান রাইসি বলেছেন, ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী এবং ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সী তিন শরও বেশি শিশু পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।ইরানে শিশু ও কিশোর বয়সীদের মৃত্যু, আহত ও আটকের ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফও।