সারাদেশে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে চার শতরও অধিক আরামদায়ক, বিলাস বহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গন-পরিবহন। দেশের বিদ্যমান আইনের তোয়াক্কা নয়া করে, খোদ সরকারী কিছু কর্মচারীদের পৃষ্টপোষকতায় আইনের অপব্যাখ্যা করে সাধারন জনগনকে জিম্মি করে অবৈধ পন্থায় লুটে নিচ্ছে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা।
কয়েকদিন আগে প্রকাশিত বিডি নিউজ ২৪ ডট কম এর একটি প্রতিবেদন “এসি বাস: কোনো নিয়ম-কানুনের মধ্যে নেই তারা।“ প্রতিবেদনকারী,বিডি নিউজ ২৪ ডট কম এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জনাব ওবায়দুর মাসুম । তাঁকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে তিনি জনগনের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিষদ তথ্য সমৃদ্ধ এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত করেছেন। প্রকাশিত প্রতিবেদনের কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করে জনাব ওবায়দুর মাসুম সাহেব সহ সাংবাদিক ভাই, বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ করবো বিষয় গুলি পর্যালোচনা পূর্বক জনসার্থ বিবেচনায় সত্য প্রকাশে দেশের লক্ষ-কোটি সাধারণ জনগনকে আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হতে রক্ষা করতে সচেষ্ট ভূমিকা রাখবার জন্য।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রনীত আইন অনুসারে পরিবহন সংস্থা গুলো সেবার মুল্য টাঙ্গায় না।
যাত্রীদের সেবায় আরামদায়ক ভ্রমনের জন্য পরিচালিত বাসের ক্ষেত্রে সেবার ধরন অনুযায়ী প্রতি যাত্রী/প্রতি সীটের ভাড়ার হার বি আর টি এ/আর টিসির নিকট প্রস্তাব পেশ করে তা অনুমোদন করিয়ে নিয়ে সেই হারে গ্রাহকের নিকট হতে ভাড়া আদায়যোগ্য।
অথচ কোন পরিবহন সংস্থায় এই অনুমোদন না করে নিজেরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করে আসছে। সরকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গুলোর এ বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ দুরেই থাকলো, উপরন্তু পরিবহন সংস্থার ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চিন্তায় তারা ব্যস্ত।
উক্ত প্রতিবেদনে ২০১৬ সালে বিআরটি এর নির্ধারণ করে দেওয়া সর্বশেষ ভাড়ার তালিকার কথা উল্লেখ করা আছে। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশিত গেজেট ২০১৬ সালের ৪ই মে বুধবার বিআরটিএ সংস্থাপন অধিশাখা যে প্রজ্ঞাপন জারি করে তার নং ৩৫.০০.০০০০.০২০.২৬.০০৫.১৬-১৬৩- The Motor Vehicle Ordinace, 1983 (LV of 1983) এর Section 52 (1)(d)(ii) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার আন্তজেলা ও দূর পাল্লায় চলাচল কারী বাস ও মিনি বাসের সর্ব্বোচ্চ ভাড়া পুনঃ নির্ধারণ করে। উক্ত প্রজ্ঞাপনে দুইটি অনুচ্ছেদ রয়েছে (ক) এবং (খ) উল্লেখ্য এই প্রজ্ঞাপন ঢাকা মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং চট্রগ্রাম মহানগর এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
কিন্ত উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ, “রাজধানীসহ সারাদেশে চলাচলকারী বাস মিনিবাসের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে দিলেও তার আওতায় নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত বাস।“ ২০১৬ সালের বাংলাদেশ গেজেট প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বি আর টিএ এর জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের অনুচ্ছেদ “খ” এ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, প্রস্তুতকারক/ বিআরটিএ কতৃক অনুমোদিত আসন সংখ্যা কমিয়ে আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য বাস মিনিবাস এর আসন সংখ্যা পূর্ণ বিন্যাস করা হলে উপরি-উক্ত অনুচ্ছেদ “ক” অনুযায়ী আনুপাতিকহারে ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। সে ক্ষেত্রে রুট পারমিট অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ/আরটিএস হতে আনুপাতিকহারে ভাড়ার হার অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। সরকারি গেজেটে যেহেতু উল্লেখ রয়েছে যে বিআরটিএ/আরটিসি হতে আনুপাতিকহারে ভাড়ার হার অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে তাহলে যদি কোন পরিবহন সংস্থা ২ কোটি টাকা মুল্যের বাসে এসি লাগিয়ে, টিভি লাগিয়ে, আসন কমিয়ে যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক ভ্রমনের ব্যাবস্থা করে, সাথে যদি প্রত্যেক যাত্রীর শরীর ম্যাসেজ করবার জন্য একজন করে কর্মীও নিয়োগ করে, তবে সেই পরিবহন সংস্থা তার প্রতিটি সুবিধা/সেবার মুল্য নির্ধারন করে বি আর টিএ কর্তৃপক্ষের নিকট তার প্রতি সীট/প্রতি যাত্রীর জন্য ভাড়ার হার নির্ধারন করে প্রস্তাব দিলে, বি আর টি এ কতৃপক্ষ যাচাই বাছাই করে প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে ক অনুচ্ছেদের আলোকে ভাড়ার হার অনুমোদন করে দিবে। অনুমোদনকৃত ভাড়ার অতিরিক্ত যাত্রীর নিকট থেকে আদায় করলে তা অপরাধ বলেই বিবেচিত হবে।
এই বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি পরিবহন সংস্থাও আইনের তোয়াক্কা করে নাই। এই অনুমোদন নেওয়ার দরকারই পড়ে নাই তাদের। প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনের আইন মানতে বাধ্য করতে পারে নাই, পারলে কিংবা করলে বিআরটিএ এর নিকট অবশ্যই এসি/আরামদায়ক পরিবহনের মোট সংখ্যা জানা থাকতো! কিন্তু প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, “সারাদেশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের সংখ্যার কোনো হিসাব বিআরটিএ দিতে পারে নাই।“ প্রতিবেদনে বিআরটিএ কর্মকর্তা মাহবুবে রাব্বানীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “দেশে তথাকথিত বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া কঠিন, ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে গেলে অনেক পরিবহন সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান টিকতে পারবেন না।“ ঊক্ত ভদ্রলোককে কি সরকার পরিবহন সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব দিয়েছেন?
জনগনের টাকায় পোষ্য এতো জনবল থাকা সত্তেও অবৈধ টাকার মোহে তারা এতোটাই আবিষ্ট যে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট এর জন্য তাদের সামনে গাড়ী উপস্থাপনেরও দরকার হয় না। আর দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এমনই পাকা ড্রাইভারকে লাইঃ প্রদান করে যে সেই সকল ড্রাইভার ফুটপাতেও মানুষের উপর গাড়ী তুলে দেয়। বিগত কয়েক বছরের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র দ্বারাই প্রমানিত হয় যে তারা কিভাবে মানুষকে মরার সেবা প্রদান করার জন্য মন্তব্য করে যে, এসি বাসের ভাড়া নির্ধারন করতে গেলে অনেক পরিবহন সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান টিকতে পারবে না।
২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৭৩৯৭ জন। ২০১৮ সালে ৭ হাজার ৭৯৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯৮০ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৮ সালের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলেছে বাংলাদেশে বছরে ২৪ হাজারের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আজকের যুগান্তর অনলাইনের খবর ১২৩ দিনে ঝরল ১১৮৯ প্রাণ: স্কুলছাত্র শিশুসহ সড়কে নিহত ১১।
ফিটনেস বিহীণ গাড়ির রুট পারমিট, অদক্ষ চালকদেরকে দালাল মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইঃ প্রদান, আর বাস মালিক সিন্ডিকেটের টাকার বস্তা। তারা জানে, খোদ সরকারই এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি, তা না হলে এভাবে প্রকাশ্য মিথ্যাচার, আইন বিরুদ্ধ কথা বলবার সাহস যে জুটতো না, সেটি সাধারন জনগন এখন বোঝে। প্রতিদিন দেশের কোটি কোটি সাধারন জনগনের পকেট থেকে অবৈধ ও বে আইনি পন্থায় জনগনকে জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সম্প্রতি ঈদকে পুঁজি করে যখন একেকটি পরিবহন সংস্থা প্রতিদিন ২-৩ লক্ষ টাকা অবৈধ আয় করেছে তখন আর বি আর টি এর ভ্রাম্যমান আদালত ১০ দিনে একদিন এসে লোক দেখানো জরিমানা করছে ২৫ হাজার! আমরা সাধারন জনগন কি হেরে যাবো এই মুষ্ঠিমেয় কিছু লোকের সিন্ডিকেট এর কাছে? আমরা কি ব্যর্থ হবো, কোটি জনতাকে এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্ত করতে?