মঙ্গলবার রাতে কুর্মিটোলায় বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকায় এক বৈঠকের এ সিদ্ধান্ত দেয় পরিচালনা পর্ষদ। বিমান পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিত্ব করেন এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক প্রকৌশলী গ্রুপ ক্যাপ্টেন খন্দকার সাজ্জাদুর রহিমের (অবঃ) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ।
মিশরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে লিজে আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ ফেরত সংক্রান্ত বিষয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান পরিচালনা পর্ষদ।
২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল চুক্তিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (প্রকৌশল) পদে নিয়োগ পান গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) খন্দকার সাজ্জাদুর রহিম। অন্যদিকে বিমানের স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত গাজী মাহমুদ ইকবাল প্রধান প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা যায়, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ইজিপ্ট এয়ার থেকে ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ দুটির মধ্যে একটি বিমান বহরে যুক্ত হয়। অপরটি যুক্ত হয় মে মাসে। এক বছর ফ্লাইট পরিচালনার পর এর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়া আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন।
দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও নতুন ইঞ্জিন আনা হয় ভাড়ায়। কিন্তু ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সেই ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও বিকল হয়ে যায়। পরে ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হয় বিমানকে। রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমানকে সব ব্যয় বহন করে।
এয়ারক্রাফট দুটি ভাড়ায় আনার পর থেকে চারটি ইঞ্জিন নষ্ট হয়। চুক্তি অনুযায়ী ইঞ্জিনগুলো বিমানের মেরামত করে দেয়ার কথা। সে হিসেবে চারটি ইঞ্জিন ক্রয় ও মেরামত বাবদ বিমানের ৪০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে বলে সূত্র জানায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩২১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া উড়োজাহাজ দুটির মাসিক ভাড়া বাবদ বিমানকে প্রতি মাসে ১.১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হয়। এতে চার বছরে দুটি এয়ারক্রাফটের জন্য ৪৬৬ কোটি ১২ লাখ টাকা দিতে হয়।
অপর দিকে চুক্তি অনুযায়ী উড়োজাহাজ দুটি ইজিপ্ট এয়ারকে ফেরত দেয়ার সময় আগের অবস্থায় করে দিতে হয়। এজন্য খরচ বহন করে বিমান।
ভাড়া নেয়ার পর বিমান উড়োজাহাজ দুটি রং পরিবর্তন করে বিমানের লোগো স্থাপন করে। ভেতরেও রং পরিবর্তন করে। সিটের সংখ্যা বাড়ায়। আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হলে কনসালটেন্ট ফার্মের হিসাব অনুযায়ী বিমানকে দুটি এয়ারক্রাফটের জন্য ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ৮৩৭ কোটি টাকা।
অনিয়মের খবর পেয়ে গতবছরে জুনে তদন্ত কমিটি গঠন করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কামরুল আশরাফ খানের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
পরের মাসে ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, উড়োজাহাজ দুটি লিজ চুক্তির সব শর্তই ছিল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে। লিজ এবং মেরামতের ক্ষেত্রে ‘চরম অবহেলা ও অনিয়ম’ ঘটেছে।
বিমান মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে ‘চরম উদাসীনতা’ দেখিয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়। সেই সঙ্গে ‘অপ্রচলিত ব্যয়বহুল’ এ লিজকে বিমানের স্বার্থবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে উড়োজাহাজ দুটি ফেরত দেয়ার সুপারিশ করে কমিটি।
এতে বলা হয়, লিজ নেয়ার সময় ইঞ্জিনের সক্ষমতা যাচাইয়ে ব্যর্থতা এবং ‘অপ্রচলিত ব্যয়বহুল এই লিজ’ বিমানের স্বার্থবিরোধী।