বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এবার যুক্তরাজ্য থেকে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। দেশটির সংসদে দাঁড়িয়ে দুই সদস্য বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন। আর দেশটির অল পার্টি পার্লামেন্ট গ্রুপ বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় ৫ আগস্টের পর মৃত্যুর ঘটনা বেশি হয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে এসব বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরতে ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ছোট দুটি ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার ব্রিটিশ সংসদের দুই সদস্য বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতির ওপর। সে বক্তব্যে কিছু ভুল তথ্য রয়েছে, সেটি হাইকমিশনারকে জানিয়েছি। এ ছাড়া ব্রিটেনভিত্তিক কয়েকটি সংগঠন কিছু তথ্য তুলে ধরেছে, যাতে প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হয়নি।
তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, সংসদ সদস্যরা তো যা ইচ্ছা বলবেন, এখানে কারও কিছু করার নেই। কিন্তু বাংলাদেশের এ বিষয়ে যে অবস্থান রয়েছে, তা ব্রিটিশ সরকারকে জানাতে অনুরোধ করেছি। সারাহ কুক বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমেও বিষয়টি জানাতে অনুরোধ করেছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাজ্যের অল পার্টি পার্লামেন্ট গ্রুপের একটি বড় প্রতিবেদন এসেছে। এ বিবৃতি নিয়ে বাংলাদেশ দুঃখ পেয়েছে। কারণ সেখানেও দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, ৫ আগস্টের পর বেশি মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ৫ আগস্টের আগে মৃত্যুর সংখ্যা বলা হয়েছে ২৮০ জন এবং মোট সংখ্যা ১ হাজারের বেশি। ৫ আগস্ট এবং তারও আগে অন্তত ১ হাজার ৫০০ জন নিহত হয়েছেন, এটি হাইকমিশনারকে জানিয়েছি। এর মধ্যে ৭৮০ জনের তথ্যসহ তালিকা করা হয়েছে। বাকি অনেকের পরিচিতি এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। তাদের লাশ পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর কিছু ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সেটি সঠিক নয়। বাংলাদেশে ৫ আগস্টের আগে এত বড় একটি ঘটনা যে ঘটেছে, বিপুল সংখ্যক ছেলেমেয়েকে রাস্তাঘাটে গুলি করে মারা হয়েছে, সেটি অল পার্টি পার্লামেন্ট গ্রুপের প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।
এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের বেশ একটি শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে দেশটির সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী। এর পাশাপাশি ব্রিটিশ রাজনীতিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের বেশ প্রভাব আছে। আর ৫ আগস্টের পর ভারতের গণমাধ্যম থেকে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, সব মিলিয়ে ব্রিটিশরা প্রভাবিত হয়েছেন। ফলে এখন ভারতের পর সেখান থেকে বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার শুরু হয়েছে।
ভারত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটি খুব স্পষ্ট, বাংলাদেশ চায় ভালো সম্পর্ক। তবে সেটি পারস্পরিক হতে হবে। দু’পক্ষ থেকেই সেটি চাইতে হবে, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
এ সময় ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক (এফওসি) নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈঠকটি এক দিন এগিয়ে আসতে পারে। তা না হলে ১০ ডিসেম্বর।
এদিকে বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আগামী সোমবার এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। আর বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকা আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রি।