ভারতকে উড়িয়ে দারুণ জয়ে এশিয়া সেরা হলেন যুবারা। গতকাল দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অল্প পুঁজি নিয়েও ৫৯ রানের বিশাল জয়ে যুব এশিয়া কাপের শিরোপা ধরে রাখল বাংলাদেশ। গত আসরে লঙ্কানদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।
ভারতীয় ইনিংসের ৩২তম ওভারে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে হাজার হাজার বাংলাদেশি দর্শক উল্লাসে মেতে ওঠেন। বাংলাদেশের পেসাররা একের পর এক টপ টপ করে ভারতীয় উইকেট শিকার করছিলেন। আল ফাহাদ আর মারুফ মৃধা দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেন। এরপর সিদ্ধার্থকে (২০ রান) রিজান হোসেন এবং কার্তিকেয়াকে ইকবাল হাসান শিকার করেন। পরের উইকেটগুলোও দ্রুতই তুলে নেন ইকবাল, আল ফাহাদরা।
তবে ভারতীয় ইনিংসে এক পাশ দৃঢ়তার সঙ্গেই ধরে রেখেছিলেন দলটির অধিনায়ক মোহাম্মদ আমান। ৩২ নম্বর ওভারে ভারতের নিভু নিভু আশার প্রদীপটাও নিভে যায়। আজিজুল হাকিম তামিমের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। সঙ্গে শেষ হয় ভারতীয়দের সব আশা।
বাংলাদেশি দর্শকরা এই আউটের পরই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উৎসব শুরু করে দেন। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে কোচিং স্টাফ আর ক্রিকেটাররা যোগ দেন সেই উৎসবে। ১১৫ রানে ৮ উইকেট শিকার করার পর বাংলাদেশের যুবাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার।
তবে উৎসবের মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা যোগ করে প্রতিপক্ষ ভারত। সাম্প্রতিক সময়ে নানা ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চলছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। সেই উত্তেজনা কেবল রাজনীতি-কূটনীতির মধ্যেই থেমে নেই। খেলার মাঠেও এর রেশ দেখা যায়। ভারত-বাংলাদেশ যে কোনো খেলায় মুখোমুখি হলেই বাড়তি উত্তেজনা চোখে পড়ে। ক্রিকেট কিংবা ফুটবল হলে তো কথাই নেই।
কয়েক মাস আগে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সাবিনাদের কাছে পরাজিত হয় ভারতের মেয়েরা। সেই ম্যাচ নিয়ে কী উৎসবই না করেছিল ক্রীড়ামোদীরা। এবার যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে দারুণ এক জয়। গত বছর শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে প্রথমবার এই টুর্নামেন্ট জয় করেছিল বাংলাদেশ। তবে এবারের জয়টা প্রতিপক্ষ ভারত হওয়ায় দর্শকদের উচ্ছ্বাস ছিল অনেক বেশি।
ছয় বছর আগের কথা। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বড়দের এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে শেষ মুহূর্তে হেরেছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের শেষ বলে ১ রান নিয়ে জয় নিশ্চিত করেছিলেন রোহিত শর্মারা। সেই মাঠে ছয় বছর পর বড়দের হয়ে মোক্ষম এক প্রতিশোধ নিয়ে নিলেন আজিজুল হাকিম তামিমরা। প্রতিশোধ নেওয়ার শুরুটা ভালো ছিল না। ভারতীয় বোলারদের দাপটে মাত্র ১৯৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সে সময় অনেকের কাছেই শিরোপা বহদূরের বলে মনে হয়েছিল।
মোহাম্মদ শিহাব (৪০ রান), রিজান হোসেনের (৪৭ রান) আর ফরিদ হাসানের (৩৯ রান) কিছুটা আশার আলো দেখায়। এরপর বল হাতে বাংলাদেশের পেসাররা বাকি কাজটা করে দেন। ইকবাল হাসান ইমন ২৪ রানে ৩ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হন। তিনি টুর্নামেন্টে মোট ১৩ উইকেট শিকার করে টুর্নামেন্ট সেরাও হয়েছেন। ফাইনালে তিন উইকেট শিকার করেন অধিনায়ক আজিজুল হাকিমও।
এ ছাড়াও আল ফাহাদ দুটি এবং মারুফ মৃধা ও রিজান একটি করে উইকেট শিকার করেন। ভারতকে ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ।
যুব এশিয়া কাপে বাংলাদেশ টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অভিনন্দন জানান।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশন অভিনন্দন জানিয়েছে। যুবারা জিতলেও জাতীয় দল এখনো এশিয়া কাপ জয় করতে পারেনি। তিনবার ফাইনাল খেলে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ছোটদের পথ ধরে এবার বড়রাও এনে দিতে পারে এশিয়া কাপের ট্রফি!