দৈনিক সচেতন বার্তার অপরাধ বিষয়ক অনুসন্ধানী টিম ‘সচেতন চোখ’ এর তথ্যানুসন্ধানে প্রতিবেদন
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দারুস সালাম থানার এসআই (নিঃ) আবু মুসান্নার বিরুদ্ধে মোঃ আব্দুল খালেক নামে এক ব্যক্তিকে জিম্মি করে নগদ টাকা, মোবাইল হাতিয়ে নেওয়ার পরে তার পরিবারের সদস্যকে মোবাইলে হুমকি হুমকি দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ(ব্যক্তিগত) আকাউন্টের মাধ্যমে টাকা আদায় করার পর তার এইসব বেআইনি কার্যকলাপকে আড়াল করার জন্য অমানবিকভাবে খালেককে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনের ৩৬(১) এর টেবিলের ১০(ক) ধারায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে জেল হাজতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশের উক্ত এস আই (নিঃ) আবু মুসান্নার বিরুদ্ধে অমানবিকতার স্বীকার ভুক্তভোগী খালেকের বড় ভাই বেলাল গত ১লা অক্টোবর ২০১৯ তারিখ এই অমানবিকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ পন্থায় ৫০ হাজার টাকা ও ২৫ হাজার টাকা দামের একটি নতুন মোবাইল সেট লুট, জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা আদায় করার পরেও মিথ্যা মামলা দায়েরের তথ্য-প্রমান সহ ‘পুলিশ মহাপরিদর্শক’ বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এর আগে তিনি, সিলেট-জকিগঞ্জ থানায় টাকা পাঠানো বিকাশের একাউন্টের নাম্বার (০১৭১৫-৩০১৩১২) উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ দায়েরের পর আব্দুল খালেকের ছোটভাই জুনায়েদ আহমেদ, দৈনিক সচেতন বার্তার অপরাধ বিষয়ক অনুসন্ধানী টিম ‘সচেতন চোখ’ এর কাছে মোবাইল করে তার ভাইকে জিম্মি করে টাকা আদায় ও নিখোঁজ এর খবর জানিয়ে তার ভাই এর সন্ধান পেতে সাহায্য চাইলে, সচেতন বার্তার অনুসন্ধানী টিম অনুসন্ধান শুরু করে। প্রাপ্ত অভিযোগ তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে, জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আবু নাসের সাহেবের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ গ্রহনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “অভিযোগ টি এএসআই জিয়াকে তদন্তের দায়িত্বে দেয়া হয়েছে।”ওসি জিয়ার মোবাইল নাম্বার দেন এবং অগ্রগতি জানতে তার সাথে যোগাযোগ এর অনুরোধ জানান। এএসআই জিয়ার সাথে যোগাযোগ করে তদন্তের অগ্রগতি কিছু আছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। তিনি জানান, “এখনো তদন্ত শুরু করেননি” তাকে প্রশ্ন করা হয়, একটা মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের পরে মানুষটি নিখোঁজ, এমন অভিযোগ কি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি বলেই এখনো তদন্ত শুরু করেননি? এর জবাবে তার বক্তব্য ছিল, “ঘটনাটি ঢাকার, যারফলেই বিলম্ব।“ তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, সরকার কি আপনাকে ঢাকার সাথে যোগাযোগ এর জন্য পর্যাপ্ত উপকরন দেয়নি? জবাবে বলেন, আসলে আমি সকালেই হাতে পেয়েছি।
সচেতন বার্তার সাথে কথা হওয়ার কিছু সময় পরেই এএসআই জিয়া অভিযোগকারী বেলাল আহমেদকে মোবাইল করে বলেন,” অভিযোগটি আপনাকে ঢাকায় ঘটনা স্থানের কোন থানায় গিয়ে করতে হবে। আমাদের এখানে তেমন কিছু করার নেই, বিষয়টি আমি ওসি স্যারের সাথে আলাপ করেছি, তিনিই আপনাকে এই কথা জানাতে বলেছেন।“ অভিযোগকারী উক্ত এএসআই এর বক্তব্যের রেকর্ড সচেতন বার্তাকে দেয়।
প্রকৃতপক্ষে, এএসআই জিয়া জানতে পারে ঘটনাটি বাইরের কোনো সন্ত্রাসী নয় বরং তাদেরই সহকর্মী সন্ত্রাসীর দ্বারাই ঘটেছে। এসআই মুসান্নার দ্বারা প্রভাবিত তিনি ওসি’র সঙ্গে কথা বলে অভিযোগকারীকে মোবাইলে সেই কথা বলে।
বিষয়টি পরিষ্কার হয় যখন এসআই মুসান্নার ব্ল্যাকমেইল এর শিকার খালেক এর চাচা সচিবালয়ের সাবেক কর্মচারী জয়নাল আহমেদ ও ছোট ভাই জুনায়েদ থানায় অভিযোগের নাম্বার আনতে যান। যে ওসি ঘটনা পড়ে অভিযোগ হিসেবে দিতে বলেছিলেন, অভিযোগ গ্রহন করে এএসআই জিয়াকে তদন্তেও দেন, সেই ওসিই তার চাচা ও ছোট ভাইকে জিয়ার বলা বক্তব্যের সুরে বলেন, “ঢাকায় গিয়ে অভিযোগ করতে হবে।” অভিযোগের নাম্বার দেওয়া যাবে না বলেও জানান তিনি।
তার চাচা জয়নাল আহমেদ জানান, “জকিগঞ্জ থানার ওসি এবং এএসআই জিয়া অপরাধীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদেরকে নায্য সেবা না দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য করছেন। বিষয়টি তার ভাতিজা বেলাল সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মহোদয় কে জানিয়ে ২৬ শে সেপ্টেম্বর অভিযোগ করেছেন।“ তিনি আরো বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের এর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
অভিযোগ তথ্যের সূত্র ধরে ‘সচেতন চোখ’ ডিএমপি’র দারুস সালাম থানায় নিখোঁজ খালেক সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধানে গেলে থানার ডিউটি অফিসার নিশ্চিত করেন, এসআই আবু মুসান্না ১৫ই সেপ্টেম্বর খালেককে আটক করেছিল। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। কি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে, তার বিস্তারিত ডিউটি অফিসার জানাতে গিয়ে বলেন, “তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।” ‘সচেতন চোখ’ এজাহারে উল্লেখিত খালেককে আটকের স্থান বাগবাড়ী গাবতলী বলাকা হোটেলের আশেপাশের দোকানদারকে সে দিনের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, পুলিশ একজনকে গাড়ীতে তুলে নিয়ে গেছে সেটা কেউ কেউ দেখেছে কিন্তু তাকে সার্চ করতে তারা দেখেনি বলে জানিয়েছে। এসআই মুসান্না এজাহারেও উক্ত স্থানের কোন দোকানদারকে সাক্ষী হিসেবে অন্তভুক্ত করেনি।
অভিযুক্ত দারুস সালাম থানার এস আই (নিঃ) আবু মুসান্নাকে মোবাইলে উক্ত মামলার বিষয়ে জানতে চেয়ে, আটক খালেকের নিকট কোন মোবাইল ফোন পেয়েছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,” কই না তো, কোন মোবাইল পায়নি।“ এজাহারে তিনি আসামীকে আটকের সময় রাত ১০.৩০মিঃ উল্লেখ করেছেন কিন্তু তাকে রাতের অন্ধকারে, লাইটের আলোতে নাকি জ্যোৎস্নার আলোতে সার্চ করেছিলেন সেটা কেন উল্লেখ করেননি এই প্রশ্ন শুনে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন মুসান্না সাহেব। তখন তিনি বলেন, “জী বলেন।“ তারপরে কথা বলতেই তিনি কলটি কেটে দেন। পরবর্তীতে তিনি আর ফোন রিসিভ করেনি।
এস আই (নিঃ) আবু মুসান্নাকে ফোন করার পরে জনৈক ব্যক্তিকে দিয়ে বারংবার তিনি সচেতন বার্তাকে ফোন করিয়েছেন পত্রিকায় রিপোর্ট না করতে এবং অভিযোগকারী পক্ষকে নিয়ে বসে আপোষ করারও প্রস্তাব দেন উক্ত ব্যক্তি।
খালেকের নিকট এলজি এক্স৪ মডেলের একটি নতুন মোবাইল ফোন ছিলো। ফোনটি তার ফুপাতো ভাই ঘটনার ১৫-২০ দিন আগে কোরিয়া থেকে পাঠিয়েছিল। অভিযুক্ত এস আই এর জিম্মায় খালেক থাকাকালীন সময়ে সেই মোবাইল ফোন থেকেই খালেকের পরিবারকে আড়াই ঘন্টায় ৫৪ বার সরাসরি এবং ১৩ বার মিস কল দিয়ে বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে টাকা নেয়। টাকা পাওয়ার আগ মুহুর্তে এস আই মুসান্না খালেককে শারিরীক ভাবে নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টাও করে। জেলখানায় খালেকের সাথে তার ভাই বেলাল দেখা করতে গেলে খালেক সেই নির্যাতনের কথা ও সেদিনের পুরো ঘটনা বেলালকে জানায়।
অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, অভিযুক্ত পুলিশের এসআই আবু মুসান্না(বিপি নং-৬৮৮৮০৩৭৬৫৭) ১৯৮৮ সালে কন্সটেবল হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয়। তার অফিশিয়ালি ব্যবহৃত (০১৭৫৭৯৫৩৩০০)নাম্বারটি দিয়ে ‘ইমন মুন্না’(Imon Munna) নামে একটি ফেক ফেসবুক আইডি খুলে রেখেছেন। বিকাশে টাকা নেওয়া নাম্বার (০১৭১৫-৩০১৩১২)দিয়ে হাসিবুর রহমান(Hasibur Rahman) নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট আছে। উক্ত নাম্বারটি সফটওয়্যার দিয়ে সার্চ করলে নাম পাওয়া যায় Asif/gofur.
এস আই মুসান্নার অফিসিয়ালী ব্যবহার করা মোবাইল নাম্বার দিয়ে খুলে রাখা ফেক আইডি এবং বিকাশ নাম্বারের ফেসবুক আই ডি।
গত ৪/১০/২০১৯ তারিখ এস আই আবু মুসান্নার অনৈতিক, বে-আইনি কর্মে হাজতবাসকারী খালেকের ভাই বেলাল আহম্মেদ দৈনিক সচেতন বার্তার অফিসে এসে ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে কাঁদতে থাকেন। কথা বলতে গিয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “তার ভাই এর নামে কোন জিডি পর্যন্ত নাই। অথচ আজ এভাবে তাকে জেল খাটতে হচ্ছে।“ বেলাল পুলিশের উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে দায়ের করা অভিযোগ গুলোর কপি সহ অন্যান্য প্রমানাদির কপি দেন।
তিনি দেশের সাংবাদিক, মিডিয়া সহ সকলের কাছে অনুরোধ জানিয়ে এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে আহবান জানান। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে এই অন্যায়ের দৃষ্টান্তমুলক বিচার দাবী করেন।