নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ মার্জিয়া মডেল স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন এলাকায় গত ১১ই অক্টোবর শুক্রবার সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে আসার প্রত্যয়ে হাজীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক আইলপাড়া সম্মিলিত নাগরিক সমাজের উদ্যোগে বিভিন্ন পেশাজীবি, সংগঠক ও এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমাজকর্মী হোসনে আরা স্বাক্ষরিত প্রেস রিলিজের মাধ্যমে উক্ত সভার বিস্তারিত জানানো হয়।
‘শিল্পাঞ্চলে শিল্প কারখানা নাও – আবাসিক এলাকায় থাকতে দাও’, শ্লোগানকে ধারণ করে সমাজকর্মী মোঃ আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে এবং হোসনা আরার সঞ্চালনায় উক্ত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন হাজীগঞ্জ কিল্লা রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান, আব্দুল আলী ফকির স্মৃতি সংসদ প্রধান সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা সাচ্, আব্দুল মান্নান কল্যানমূখী পাঠাগার সভাপতি সাউদ হাসান, বিশিষ্ট সাংবাদিক মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া কাজল সহ সম্মিলিত নাগরিক সমাজের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে শিল্প কারখানা- জীবনের বিনিময়ে শিল্প কারখানা নয়। তারা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এর বক্তব্যের উদ্ধৃতি ‘জনবসতিপূর্ন ও আবাসিক এলাকায়ও কোন শিল্প কারখানা স্থাপন করা যাবে না, এসব এলাকায় যেসকল কারখানা স্থাপিত হয়েছে সেগুলোকে যতদ্রুত সম্ভব সরিয়ে নিতে হবে। কারখানা না সরালে মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ উল্লেখ করে “মেসার্স আনোয়ারা ফ্যাশন লিঃ” এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, “মেসার্স আনোয়ারা ফ্যাশন লিঃ” উত্তর হাজীগঞ্জ আবাসিক এলাকাতে বেআইনী ভাবে নিটিং কারখানা স্থাপন করে পরিবেশ দূষণ করে তুলছে। প্রতিষ্ঠানটি ৩৫ টি নিটিং মেশিন দিয়ে দিনরাত উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। এই নিটিং কারখানার পাশেই সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ এবং ছাত্রাবাস, তাদের স্টাফ কোয়াটার, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বিদ্যানিকেতন, ১০৪ নং পাঠানটুলী আইলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইলপাড়া আইডিয়াল স্কুল ও মার্জিয়া মডেল স্কুল এন্ড কলেজ অবস্থিত। এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রায় ৩১২৪ জন ছাত্র-ছাত্রীসহ সকলের পরিবার ও হাজার হাজার বাসিন্দা অত্র এলাকাতেই বসবাস করে। তাছাড়াও অফিস-আদালত, মসজিদ-মাদ্রাসা, ঈদগাঁ, কবরস্থান ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যান কেন্দ্রসহ বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অত্র এলাকাতে রয়েছে।
এই নিটিং কারখানা স্থাপনের ফলে এলাকায় বসবাসরত সকলের স্বাভাবিক জীবনযাপন চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। কারখানার সৃষ্ট বায়বীয় বর্জ্য, তুলা ও সুতার ডাস্ট সকলের ঘর – বাড়িতে ঢুকে ময়লার স্তুপ হয়ে যায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত অনেকই শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। জেনারেটর ও
বিভিন্ন মেশিন চালানোই বিকট শব্দের উৎপত্তি শব্দ দূষণ ঘটানোর ফলে এলাকার লোকজন রাতে স্বাভাবিক ভাবে ঘুমাতে পর্যন্ত পারে না।
এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছাড়াও ছাত্র – ছাত্রীদের পড়াশোনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নবজাত শিশুসহ সকল শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে।
এমতবস্থায়, ইতিপূর্বে এ বিষয়ে মালিক পক্ষকে বহুবার মৌখিক ও লিখিতভাবে কারখানা স্থানান্তরের অনুরোধ করেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসীর পক্ষথেকে বিভিন্ন দফতরে দফায় দফায় অভিযোগ দাখিলের পর গত ২৫/০৩/১৯ ইং তারিখ সকালে স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিদর্শক তানজিনা আক্তার সরেজমিন প্রত্যক্ষ করে গেলেও অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। গত ০৫/০৫/১৯ ইং রাজউক কর্তৃক
পরিদর্শক তারেক ও দু’জন সহযোগীর একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে এসে প্রত্যক্ষকালে মেসার্স আনোয়ারা নিটিং কারখানার কর্তব্যরত প্রশাসনিক কর্মকর্তার নিকট অনুমোদন সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি দেখতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটি রাজউক এর পরিদর্শকগনকে তা দেখাতে পারেননি ফলে রাজউক এর রিদর্শক তারেক চলমান কনস্ট্রাকশনের কাজ বন্ধ করে দেন এবং নির্দেশ দেন চূড়ান্ত মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত যাতে কোন ধরনের নির্মাণ কাজ না করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারিখ ও ৩ টি স্মারক নং উল্লেখ করে জানায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক “মেসার্স আনোয়ারা ফ্যাশন লিঃ” কে চূড়ান্ত নোটিশ দিয়ে ০৭(সাত) দিনের মধ্যে উল্লেখিত অবৈধ অবকাঠামো ভেঙ্গে অপসারণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল। নোটিশে উল্লেখিত তারিখের অতিরিক্ত ১০(দশ) দিন (১১/১০/১৯ তাং পর্যন্ত)অতিবাহিত হতে চললেও প্রতিষ্ঠানটি রাজউক এর নির্দেশ অমান্য করে যথারীতি উতপাদন অব্যাহত রেখেছে।
বক্তারা এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, রাজউকের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে অবিলম্বে অবৈধ অবকাঠামো ভেঙ্গে অপসারণ করা হোক যাতে এলাকার হাজার হাজার মানুষ দুষিত পরিবেশ থেকে পরিত্রান পেয়ে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবন যাপনের সূযোগ পায়। তারা বলেন, বনানীর এফ এফ টাওয়ারের মতো ‘অগ্নিদগ্ধ লাশের মিছিল হতে চাই না-আমরা বাঁচতে চাই।’
তারা বলেন, “মেসার্স আনোয়ারা ফ্যাশন লিঃ” যদি আইনের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে স্থাপনা অপসারন না করে আমাদেরকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে চায়, তাহলে আগামী দিনে এলাকার সকল মানুষ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই তার জবাব দিবে বলেও প্রতিষ্ঠানটিকে হুশিয়ার করে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সেলিনা আহমেদ, মোঃ জামাল হোসেন, মোঃ সালাউদ্দিন, মোঃ সহিদুজ্জামান, সুমা আক্তার, মোফাজ্জল হোসেন, কাজী আফতাব উদ্দিন, তামিম রায়হান, জাকারিয়া আব্বাসী, বাবলী আক্তার সহ এলাকার অন্যান্য সুধী ব্যক্তিওবর্গ গন।