পুলিশ ও আইনজীবীর ভুলে অপরাধ না করেও আসামি হয়ে তিন মাস কারাভোগ করাসহ ১৮ বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে থাকা বাবলু শেখ অব্যাহতি পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাইফুর রহমান সিদ্দিকীর আদালত এ রায় দেন। নাটোরের সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের বাসিন্দা বাবলু শেখ মামলা থেকে অব্যাহতির পরপরই গণমাধ্যমের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
বাবলু শেখ বলেন, ‘দুই মাস কারাভোগ, তার পর আদালতের বারান্দায় ঘুরে ১৮ বছর পর আমি অব্যাহতি পেয়েছি। আমার আইনজীবী আমার সামনে আছে। আমি অনেক খুশি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার পাশে ভাই-বন্ধুরাও আছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
বাবলু শেখের বর্তমান আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম উদ্দীন জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর বাবলু শেখের আপিল শুনানির রায়ের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সেদিন দুপুরে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাইফুর রহমান সিদ্দিকী মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানান, বাবলু শেখের বিষয়টি আলোচিত ঘটনা হওয়ায় তা অধিক পর্যালোচনা করা হবে। তাই ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যবেক্ষণসহ রায়ের দিন ধার্য করেন তিনি। কিন্তু ওই তারিখে নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মোজাম্মেল হকের মৃত্যুর কারণে ফুল কোর্ট রেফারেন্স ঘোষণা হওয়ায় আদালতের সব কার্যক্রম স্থগিত হয়। ফলে বাবলু শেখের মামলার রায়ের দিনক্ষণ পিছিয়ে যায়। পরে মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদালত ১৭ অক্টোবর আপিল শুনানির রায়ের দিন ধার্য করেন।
জানা যায়, ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল নাটোর সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে একটি মারামারির মামলার আসামি শ্রী বাবুর পরিবর্তে সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের বাবলু শেখকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। এরপর তৎকালীন আইনজীবী লুৎফর রহমান বাবু, শ্রী বাবু নামেই বাবলু শেখের জামিন করান। সেই থেকে বাবলু শেখ হয়ে যান শ্রী বাবু। দু’দফায় দুইমাস কারাভোগের পর ১৮ বছর ধরে হতদরিদ্র বাবলু শেখ নিজের সঠিক পরিচয় জানাতে ঘুরে বেড়িয়েছেন আদালতের বারান্দা থেকে বারান্দায়।
এরপর ২০১৬ সালের ২৩ জুন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন বাবলু শেখের বর্তমান আইনজীবী শামিম হোসেন। বৃহস্পতিবার সে মামলার আফিল শুনানী শেষে বিচারক বাবুল শেখকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। এছাড়া মামলার দুই তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার তৎকালীন এসআই মমিনুল ইসলাম এবং হেলেনা পারভিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া সঠিক আসামী শ্রী বাবুকে আদালতে সোপর্দ এবং তৎকালীন আইনজীবী এবং নিম্ন আদালতকে সর্তক করে দেন আদালত।