শনিবার (২৬ অক্টোবর) বেলা একটার দিকে ভোলার মনপুরা উপজেলার চর পিয়ালে এক বাগানের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ছয়জনকে আসামি করে মনপুরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও একজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সহায়তা করার অভিযোগ করেছেন তিনি।
জানা গেছে, ভোলার মনপুরার চরে স্পিডবোটের চার যাত্রী মিলে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করছে এমন খবর পেয়ে স্পিডবোটের মালিক ধর্ষকদের ধরতে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। স্পিডবোটের মালিক ও মনপুরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম গিয়ে ওই চারজনকে মারধর করে ও তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নে্য টাকা-পয়সা। শুধু তা-ই নয়, নিজেও ধর্ষণ করেন ওই নারীকে।
ধর্ষিতা গৃহবধূ চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা এলাকার বাসিন্দা। তার দুই সন্তান রয়েছে। তার দায়েরকৃত মামলার আসামিরা হলেন উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম (৩০), বেল্লাল পাটোয়ারী (৩৫), রাসেদ পালোয়ান (২৫), শাহীন খান (২২), কিরণ (২৬) ও ধর্ষণে সহযোগিতাকারী স্পিডবোট চালক রিয়াজ। তাদের সবার বাড়ি দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রামে।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার চর পিয়াল থেকে সন্তানসহ ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনো (রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত) কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ জন্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূ।
রোববার (২৭ অক্টোবর) সকালে ধর্ষিতা ওই গৃহবধূকে ভোলা সদর হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে।। পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে মনপুরা থানা পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাবার বাড়ি থেকে আড়াই বছরের সন্তানকে নিয়ে মনপুরায় যাওয়ার জন্য চরফ্যাশনের বেতুয়া লঞ্চঘাটে আসেন গৃহবধূ। ঘাটে এসে দেখেন লঞ্চ ছেড়ে চলে গেছে। পরে স্পিডবোটে ওঠেন। বোটে সে সময় দুজন পুরুষ যাত্রী ছিলেন। পথিমধ্যে খালপাড় থেকে আরো দুজন যাত্রী ওঠেন। একপর্যায়ে ৪ যাত্রী মিলে স্পিডবোটটি নির্জন চর পিয়ালে নিয়ে যেতে বাধ্য করেন। গৃহবধূকে চরে নিয়ে বাগানের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন ওই ৪ যাত্রী।
পরে স্পিডবোট চালক রিয়াজ বোটটি চালিয়ে জনতা ঘাটে এসে বোটের মালিক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুলকে জানান। নজরুল একই স্পিডবোটে করে চর পিয়ালে যান। ওই সময় নজরুল ৪ ধর্ষককে মারধর করে ৩ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন। পরে নজরুল নিজেও ওই গৃহবধূকে সেখানে ধর্ষণ করেন। এরপর গৃহবধূকে ১ হাজার টাকা দিয়ে নিজের কাছে ২ হাজার টাকা রাখেন তিনি।
বাদী এজাহারে আরো উল্লেখ করেন, নজরুল ধর্ষণের ঘটনাটি ভিডিও করে তার নাম না বলার জন্য হুমকিও দিয়েছেন। যদি বলা হয় তাহলে ফেসবুকে ওই ভিডিও ছেড়ে দেবেন বলেও হুমকি দেয়া হয়েছে।
মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চর পিয়ালে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় ৬ জনকে আসামি করে শনিবার রাতে থানায় মামলা করেছেন ওই গৃহবধূ। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ধর্ষণ কাজে ব্যবহৃত একটি স্পিডবোট জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে এই ধর্ষণ মামলার আসামি সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।