শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের কয়েকজন ছাত্রী হলের ফটকে অবস্থান করছেন। হল খুলে না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা হলের সামনে অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে । বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হয়।
গত মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় হল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তাপসী প্রাপ্তি দে বলেন, ‘হঠাৎ করে হল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা কোথায় যাব। আমাদের থাকার জায়গা নাই। হল না খোলা পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।’
শিক্ষার্থীর সাইমুম মৌসুমি বলেন, তাঁরা কয়েক দিন এখানে সেখানে থেকেছেন। কিন্তু এভাবে থাকা সম্ভব নয়। তাই তাঁরা প্রভোস্টকে হল খোলার জন্য জানিয়েছেন।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট মোহা. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অমান্য করতে পারব না। ওরা আমাকে কল দিয়েছে। আমি তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে যাব। প্রক্টর ও অন্যান্যের সঙ্গে কথা বলছি। এ বিষয়ে আমি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারব না।
এদিকে অন্যান্য দিনের মতো শুক্রবারও ক্যাম্পাসে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁরা দুর্নীতিবিরোধী ব্যঙ্গাত্মক চিত্রের ক্যানভাস এঁকে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবি করেছেন। দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনের সড়কে ক্যানভাসে এই চিত্র আঁকা হয়। চিত্রাঙ্কন শেষে এ ক্যানভাস নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করা হয়।
এ ছাড়া শুক্রবার আন্দোলনকারীদের একটি দল উপাচার্যের দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে জমা দিতে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গতকাল বৃহস্পতিবার সরব ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি হামজা রহমান লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসের সঙ্গে খেলা করছে। আমরা বারবার বলে আসছি আর্থিক কেলেঙ্কারির সত্যতা রয়েছে। স্বয়ং উপাচার্য, তাঁর স্বামী ও ছেলে আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত।’
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হাসান ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন গণমাধ্যমের সামনে ‘ঈদ সালামি’ হিসেবে হিসেবে ২৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনিও ওই আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম, তাঁর স্বামী আখতার হোসেন ও ছেলে প্রতীক তাজদিক হোসেনের সংশ্লিষ্টতার কথা দাবি করেন। এ ছাড়া শাখা ছাত্রলীগের কোন নেতা কত টাকা ভাগ পেয়েছেন তাও উল্লেখ করেন তাঁরা।