সোমবার সারাদিন ৪৫ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ কেনা নিয়ে ছিল হুলুস্থুলকান্ড। গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে সোমবার সন্ধ্যা থেকে লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে সিলেট বিভাগজুড়ে।
এমন খবরে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন সিলেট নগরের খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে। বাড়তি চাপের জন্য খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায় নগরের বিভিন্ন দোকানের লবণের মজুদ। আবার অনেক ব্যবসায়ী বেশি দামে বিক্রির জন্য লবণ মজুদ করে রাখেন। এ নিয়ে সিলেটে লবণ নিয়ে ঘটে লঙ্কাকাণ্ড।
এদিকে সিলেট নগরের কালীঘাট এলাকা থেকে সোমবার রাত ১০টার দিকে লবণ ভর্তি দুটি ভ্যান জব্দ করে জাতীয় গোয়েন্দা এনএসআই’র প্রতিনিধি দল। বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ৫০ বস্তা লবণ জব্দ করা হয়। এমন সময় দুই ভ্যান চালককে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও দুই ব্যবসায়ীকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ব্যবসায়ীরা প্রতি বস্তা ২১৬ টাকা বেশি দামে লবণ বিক্রি করেছেন বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান সদর উপজেলার এসিল্যান্ড সুমন্ত ব্যানার্জি।
আর অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির দায়ে সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে বড়লেখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে উপজেলার সাতটি দোকানের মালিককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গুজবকে কেন্দ্র করে এই হুলুস্থুলের প্রেক্ষিতে সোমবার সন্ধ্যায় জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান সিলেট জেলার পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন। নিজের ফেসবুকে পুলিশ সুপার লেখেন- ‘প্রিয় সিলেটবাসী, বাজারে নিত্য-প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কোনো কিছুর দাম বাড়তে পারে এমন গুজবে কান না দেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
সিলেট নগরের বাসিন্দা আলিম আল রাজি নামের এক চিকিৎসক সোমবার রাতে ফেসবুকে লেখেন- সিলেটে আরও একটি নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে! ‘দাম বেড়েছে’ – যারা এই গুজবটা ছড়িয়েছে তারা সফল। এখন সত্যি সত্যি অনেক যায়গায় আগের চেয়ে চারগুণ বেশি দামে এই দ্রব্যটা বিক্রি হচ্ছে। কিছু জায়গায় অবস্থা আরও খারাপ।
আগামীকাল (বুধবার) দাম আরও কয়েকগুণ বাড়তে পারে-এই আশঙ্কায় অনেকে দ্রব্যটা কিনে রাখছেন। যার ফলে অনেক দোকানে দেখা দিয়েছে সংকট। আজকে (সোমবার) বিক্রি না করে বুধবার বেশি দামে বিক্রি করবেন- এই আশায় দোকানিরাও ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছেন কৃত্রিম সংকট। সরকারের উচিত কঠোর অবস্থানে যাওয়া এবং পিটিয়ে এসব অসভ্যদের সোজা করে ফেলা।
সোমবার রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লবণ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। বেশিরভাগ মুদি দোকানেরই মজুদ ফুরিয়ে গেছে। দোকানে লবণ না পেয়ে ক্রেতারা আক্রমণাত্মক আচরণ করতেও দেখা গেছে।
সব ক্রেতারই দাবি, লবণের দাম বাড়তে যাচ্ছে এমন খবর শুনেছেন। তাই লবণ কিনতে এসেছেন তারা। যদিও সংবাদের উৎস এরা কেউই জানেনা।
সুপারশপ ‘স্বপ্ন’ র দর্শণ দেওরি শাখার ব্যবস্থাপক নাহিদ তারানা চৌধুরী বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই ক্রেতারা লবণ কিনতে ভিড় করেন। প্রতিজন ৪-৫ কেজি করে লবণ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে লবণের যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। আমরা নির্ধারিত মুল্যে ক্রেতাদের লবণ বিক্রি করছি। লবণের দাম দ্রুত বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।
অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির দায়ে জেল জরিমানা প্রসঙ্গে সিলেট সদর উপজেলার এসিল্যান্ড সুমন্ত ব্যানার্জি, অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির খবর পেয়ে আমরা কালীঘাটে অভিযানে আসি। এ সময় লবণ ভর্তি ২টি ভ্যানসহ প্রায় ৫০ বস্তা লবণ জব্দ করা হয়েছে। ২ ভ্যানচালককে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। দুই ব্যবসায়ীকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা প্রতি বস্তা ২১৬ টাকা বেশি দামে লবণ বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে। জব্দকৃত লবণ সিলেট কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।