হাসপাতালে বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ। অন্যদিকে মামলা তুলে না নিলে পরিবারের লোকজনদের গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে শ্রীপুর ইউনিয়নের প্রভাবশালী চেয়ারম্যান আজিজুল হক ফনি।
চেয়ারম্যানের হুমকি পেয়ে চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ ওই গৃহবধূর। বুধবার দুপুরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের ৮ নাম্বার বেডে চিকিৎসাধীন গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর সাথে কথা হয় সাংবাদিকদের।
এসময় ওই গৃহবধূ বলেন, ‘শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল হক ফনি মাস্টার গণধর্ষণ ও আমার স্বামী হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে। আমাকে কে কে তুলে নিয়ে গেছে, কে কে ধর্ষণ করেছে, সবাইকে আমি স্পষ্ট চিনতে পেরেছি। ওরা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, আমাকে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পিটিয়েছে। আমার স্বামী আমাকে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও বেদম প্রহার করে ধর্ষকরা। কিছুক্ষণ পর এসে তারা বলে, তোর স্বামী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমার তো হাত-পা বাঁধা ছিল, আমার সামনে থেকে মারতে মারতে আমার স্বামীকে ওরা নিয়ে গেছে। পরে এসে বলে যে, তোর স্বামী আত্মহত্যা করেছে, এটা আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো? এসব কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।’
চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রভাবশালীদের অপ-তৎপরতায় তিনি আরো মুষড়ে পড়েছেন। সঠিক বিচার পাবেন কিনা, তা নিয়ে তার মনে দেখা দিয়েছে সংশয়। এলাকার প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের দৌড়ঝাঁপ ও পুলিশের অসহযোগিতার কারণে এই ঘটনা ভিন্ন দিকে বইতে পারে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। গৃহবধূ বলেন, আমিসহ আমার পরিবারের নিরাপত্তা, ধর্ষণ ও স্বামী হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানাই।
ধর্ষিতা গৃহবধূর পাশে বসে ছিলেন তার শ্বশুর। চোখেমুখে শঙ্কা। মারধরের পর ফাঁস দিয়ে ছেলেকে মেরে ফেলায় ভেঙে পড়েছেন বাবাও।তিনি বলেন, চেয়ারম্যান ও ধর্ষকদের পরিবারের লোকজন মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। আমরা বাড়ি যেতে পারছি না। সবসময় আতংকের মধ্যে আছি। আমি আমার ছেলের হত্যাকারী ও পুত্রবধূর ধর্ষকদের ফাঁসি চাই।
এদিকে বুধবার গ্রেপ্তারকৃত ধর্ষক শাওনকে আদালতে সোর্পদ করে ৩দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আগামী মঙ্গলবার রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। তবে এখনো গ্রেপ্তার হয়নি গণধর্ষণের নেতৃত্বদানকারী ছানোয়ার ও তার সহযোগী রফিজ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও নিহতের ময়না তদন্তের প্রতিবেদন দেয়নি। এ বিষয়ে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফেরদৌস হাসান বলেন, নিহত ব্যক্তির ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়না তদন্ত রির্পোট তৈরি করা হচ্ছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যেই নিহতের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয়া হবে। ভিকটিম ওই গৃহবধূর চিকিৎসা চলছে। মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ধর্ষিতার হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তবে প্রতিবেদন তৈরি করতে সময় লাগবে। সেই প্রতিবেদনও দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেয়ার চেষ্টা করবো।
জামালপুরের পুলিশ সুপার দেলোর হোসেন বলেন, শুক্রবার রাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে জন্য মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তের রির্পোট হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে গত সোমবার রাতে অভিযোগ আসে নিহতের স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওই অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে মামলা নেয়া হয় এবং একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক ঘটনাটি বেরিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি।
এদিকে গৃহবধূ গণধর্ষন ও স্বামী হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষক শাওন ও রাফিজের পরিবার বুধবার দুপুরে জামালপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সন্মেলন করে তাদের সন্তান সম্পৃক্ত নয় বলে দাবি করে। ছানোয়ার ও ছানোয়ারের পরিবার এ ঘটনার সাথে জড়িত। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের দাবি করেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে জামালপুর সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে এক গৃহবধূ গণধর্ষণ, গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন ও তার স্বামীকে হত্যা করা হয়। ৩দিন বাড়িতে অবরুদ্ধ থাকার পর সোমবার রাতের আধাঁরে পালিয়ে এসে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন ওই গৃহবধূ। ওই রাতেই জামালপুর সদর থানায় গৃহবধূ ছানোয়ার, শাওন ও রফিজকে আসামি করে গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা করেন।