ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে মানুষ।
জেলা প্রশাসনের ভাষ্যমতে, আটক অনুপ্রবেশকারীরা দাবি করছে তারা বাংলাদেশেরই নাগরিক। কাজের জন্য ভারতে গিয়েছিলো। এখনা নানা কারণে বাংলাদেশে ফিরে আসছে।
অন্যদিকে বিজিবি বলছে, মাইগ্রেশন করে যারা ভারতে গিয়েছিলেন, তাদের সেখানে বসবাসে অসুবিধা হচ্ছে। নানাভাবে তারা চাপের মধ্যে পড়েছেন। তারাই ফিরে আসছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, এনআরসি ও নিপীড়ন আতংকের কারণে তারা চোরাই পথে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। গত দুই সপ্তাহে কমপক্ষে দুই শতাধিক ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছেন খালিশপুরস্থ ৫৮ বিজিবির সদস্যরা। বিজিবি বলছে, যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এদের মধ্যে বেশির ভাগই মুসলমান। এরা এনআরসি আতঙ্ক ও স্থানীয় নির্যাতনে দেশ ছেড়ে চলে আসছেন। তারা আর ভারতে যাবেন না বলে বিজিবির কাছে জানিয়েছেন। সহায়-সম্বল নিয়ে তারা এদেশে চলে এসেছেন। এদেরকে আটকের পর অনুপ্রবেশের দায়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলার জলুলী, পলিয়ানপুর, খোসালপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসছে বাঙালিরা। গত ১৫ দিনে ৭৫ নারী, ৬৪ পুরুষ ও ৬৪ জন শিশুকে তারা আটক করেছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) আটক করেছেন চারজনকে। এছাড়া চলতি নভেম্বরের ১৫ দিনে শুধুমাত্র মহেশপুর থানার মাধ্যমে ১৫৭ জন অনুপবেশকারীকে আদালতে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের ১৩ নভেম্বর ৩৩ জন ও ১৪ নভেম্বর ৪৯ জনসহ মোট ৮২ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
মহেশপুরের খালিশপুর বিজিবি ৫৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, মাইগ্রেশন করে যারা ভারতে গিয়েছিলেন তাদের সেখানে বসবাসে অসুবিধা হচ্ছে। নানাভাবে তারা চাপের মধ্যে পড়েছেন। বিশেষ করে ব্যাঙ্গালুরুতে এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। যে কারণে তারা ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। অনুপ্রেবেশকারীদের ভাষ্য, তারা এক সময় বাংলাদেশে ছিলেন। তারা বেশিরভাগ দুর্গম এলাকার ঠিকানা দিচ্ছেন।
তবে সীমান্ত এলাকার মানুষ বলছেন, বিজিবি যে কয়েকজনকে আটক করেছে অনুপ্রবেশকারী তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তারা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে এদেশে প্রবেশ করেছে।
এ বিষয়ে মহেশপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল আলম বলেন, যারা আটক হচ্ছে তাদের পরিচয় নিয়ে দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ বাগেরহাট ও খুলনা এলাকার মানুষ। তারা দুই দশক ধরে ভারতে গিয়ে কাজ করছিলেন। সেখানে স্থানীয় ঝামেলায় পড়ে চলে আসছেন। বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়-স্বজন রয়েছে।
জানতে চাইলে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, গত শনিবার থেকে প্রচুর সংখ্যক নারী-পুরুষ ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত অঞ্চলে আটক হচ্ছেন। ফিরে আসার দাবি করছেন তারা বাংলাদেশের নাগরিক। কারাগারে পাঠানোর পর তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের ভাষ্য, তারা পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে ছিল। ওখানে কোনো বাসা বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। সম্প্রতি ওখানে তাদেরকে কিছু লোকজন খোঁজ করছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিল তারা তাদেরকে আর রাখতে পারবে না বলে জানাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে তারা ভারতের দালাল ধরে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর বিজিবির হাতে আটক হচ্ছে।