জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পাটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এই সংবিধান অনুযায়ী সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক চর্চা আমরা করতে পারছি না। জাতীয় পার্টি সংবিধান সংরক্ষণ করতে সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে আমরা আজীবন কাজ করে যাবো। ১৯৯০ সালের আগে ও পরে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করেছে, তাদের সবাইকেই স্বৈরাচার নামে অভিহিত করা হয়।
আজ (৬ই ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালে তুমুল গণ-আন্দোলনের মুখে ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন হয়। তখন থেকে এ দিনকে আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ আর বিএনপি ‘গণতন্ত্র দিবস’ হিসেবে পালন করে। জনসাধারণের কাছে দিনটি পরিচিতি পায় ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ হিসেবে। তবে দিনটিকে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ হিসেবে পালন করে এরশাদের জাতীয় পার্টি। এ উপলক্ষেই আলোচনা সভাটির আয়োজন করা হয়।
‘বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সরকারপ্রধান সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু থাকেন। এ কারণে, আমাদের দেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারা অর্জিত হচ্ছে না। আর এ কারণেই আগে-পিছে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, তাদের সবাইকে স্বৈরাচার বলা হয়। কিন্তু সবাই মিলে দোষ দিয়েছেন শুধু একজনকে, তিনি হচ্ছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই অপবাদ দিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জাতীয় পার্টির ওপর চরম অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, এমন আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে আমরা পূর্ণ গণতন্ত্র চর্চার জন্য উপযুক্ত হতে পেরেছি কি-না তাও বিবেচনা করতে হবে। আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে যে কোনও রাজনৈতিক দলও প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চা করতে পারে না।
জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির বড় অর্জন- অন্য কোনও কায়দায় ক্ষমতায় থাকতে না চেয়ে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। অন্যায়-অবিচারের মধ্যেও জাতীয় পার্টি সংবিধান সমুন্নত রাখতে রাজনীতি করে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি কাজ করছে গণতন্ত্র বজায় রাখতে এবং গণতন্ত্র বিকশিত করতে।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, দেশের মানুষের কাছে এ বার্তা পৌঁছাতে হবে যে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় দেশে তুলনামূলকভাবে বেশি সুশাসন বজায় ছিল। জনকল্যাণের কাজে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের তুলনা হয় না। কিন্তু এখনও জাতীয় পার্টির শাসনামলের কুৎসা রটনো হচ্ছে, যেটা সম্পূর্ণ অন্যায়।
আলোচনা সভায়, ‘জাতীয় পার্টিতে নব-জাগরণ শুরু হয়েছে। দেশ ও জাতির প্রত্যাশিত দেশ উপহার দেবে জাতীয় পার্টি।’ বলেও মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি বলেন, দেশে বিশ্বজিৎ হত্যা হয়, আবরার হত্যা হয়। সারের জন্য কৃষককে হত্যা করা হয়। এটাকে আমরা গণতন্ত্র বলতে পারি না। এরশাদকে যারা স্বৈরাচার বলেন, তাদের লজ্জা করা উচিৎ। কারণ, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তাদের সবাইকে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে যেতে হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের ৮৯ শতাংশ উন্নয়ন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে হয়েছে। জেলখানায় থেকে পাঁচটি আসনে নির্বাচিত হয়ে পল্লীবন্ধু প্রমাণ করেছেন তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি এস.এম. ফয়সাল চিশতীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু সহ যুব সংহতি ও জাতীয় ছাত্রসমাজের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।