গতকাল সোমবার ময়মনসিংহ থেকে বিভিন্ন পথে বিআরটিসির বাস চলাচল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুই পক্ষের হাতাহাতিতে তিনজন শ্রমিক আহত হলে, ঘটনার প্রতিবাদে ও বিআরটিসি বাস বন্ধের দাবিতে ময়মনসিংহ থেকে সব পথে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকনেতারা।
বাস বন্ধ থাকায় ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি ঢাকাসহ সব জেলাগামী যাত্রীরা ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাদের নিজ গন্তব্যে যেত বিকল্প উপায়ে বিভিন্ন গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে। ময়মনসিংহ ট্রাফিক বিভাগ ও পরিবহনশ্রমিকদের কাছ থেকে জানা যায়, বিগত কয়েক মাসে ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও ময়মনসিংহ নগর থেকে বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। বিআরটিসির নতুন বাস যুক্তের তালিকায় ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছা উপজেলা পর্যন্ত ১০টি, ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত ৮টি এবং ময়মনসিংহ থেকে ফুলপুর পর্যন্ত ১০টি বাস রেয়েছে। এসব বাস সরকারের কাছ থেকে ইজারার মাধ্যমে সড়কে চলাচল করছিল এবং সর্বশেষ গত রোববার ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনা সড়কে আরও ১০টি বিআরটিসি বাস চালু হয়।যদিও পরিবহনশ্রমিকদের বাধায় চার ঘণ্টার মাথায় ওই বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকদের দাবি, বিআরটিসির বাস নিয়ম না মেনে চলছে। এর ফলে সাধারণ গণপরিবহনে যাত্রী কমে আসছে। এছাড়াও বিআরটিসির বাস যত্রতত্র পার্কিং করায় রাস্তাঘাটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এসকল বিআরটিসির বাসগুলো ময়মনসিংহ নগরের পাটগুদাম আন্তজেলা বাস টার্মিনাল হয়ে চলাচল করে।
গতকাল সকালে ওই এলাকায় গিয়ে বিআরটিসির বাস চলাচলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন সাধারণ গণপরিবহনের শ্রমিকেরা। এ নিয়ে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ঘটনার একপর্যায়ে পাটগুদাম টার্মিনাল এলাকায় বিআরটিসি বাসের শ্রমিকেরা তিনটি বাস রেখে চলে যান। এতে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক বন্ধ করে দেওয়ায় দ্বিতীয় দফা উত্তেজনার সৃষ্টি হলে, হাতাহাতিতে তিনজন শ্রমিক আহত হন।
এ অবস্থায় বেলা তিনটা থেকে ময়মনসিংহ জেলা মোটর শ্রমিক সমিতির নেতারা ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাসহ সব জেলায় বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেন। সাধারণ গণপরিবহনের শ্রমিকদের দাবি, বিআরটিসির বাসের শ্রমিকদের মারধরেই ওই তিনজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
সাধারণ শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, ময়মনসিংহের বিভিন্ন সড়কে বিআরটিসির বাস চলাচল শুরুর সময় বলা হয়েছিল, সাধারণ পরিবহনের শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা কর বিআরটিসির বাসগুলো চলাচল করবে। কিন্তু চলাচল শুরু করার পর সাধারণ পরিবহনের শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেনি বিআরটিসি বাসের শ্রমিকেরা। প্রায় সব সড়কেই অধিকসংখ্যক বিআরটিসি বাস চলাচল শুরু করেছে। তাই, সাধারণ গণপরিবহনের ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছে।
ময়মনসিংহ জেলা মোটর শ্রমিক সমিতির সভাপতি আবদুস ছালাম জানান, সব বিআরটিসির বাস চলাচলের একটা নিয়ম আছে। নিয়ম হচ্ছে, বাসগুলো বিআরটিসির ডিপো থেকে ছেড়ে গিয়ে অন্য কোনো ডিপোতে যাত্রা শেষ করবে। কিন্তু এখানে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। এতে সাধারণ শ্রমিকেরা ক্ষিপ্ত হয়েছেন। বর্তমানে, বিআরটিসির বাসগুলো সাধারণ গণপরিবহনের টার্মিনালের সামনে থেকেই যাত্রী নিচ্ছে।
শ্রমিকনেতাদের ঘোষণার পর গতকাল দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন পথে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিশেষ করে ময়মনসিংহ থেকে ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইলসহ বিভিন্ন উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ এবং ঢাকাগামী যাত্রীরা অত্যন্ত দুর্ভোগে পড়ে। তারা পাটগুদাম আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ও মাসকান্দা টার্মিনালে গিয়ে বাস না পেয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকে করে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়েছে।
এদিকে নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ পথে চালুর মাত্র চার ঘণ্টার মাথায় বিআরটিসির বাস বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। নেত্রকোনা জেলা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় এই কর্মসূচি থেকে বক্তারা বলেছেন, এখানে দ্রুত বিআরটিসির বাস চালু না হলে মালিক সমিতির কোনো বাসও চলতে দেওয়া হবে না।
এই ঘটনায় ময়মনসিংহ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ‘পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে’