fbpx
শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪
বাড়িজাতীয়অপরাধরাজশাহীর সাবেক শিবির নেতা টিপু রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন আদালত

রাজশাহীর সাবেক শিবির নেতা টিপু রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন আদালত

রাজশাহীর বোয়ালিয়ার সাবেক শিবির নেতা মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু রাজাকার ওরফে টিপু সুলতানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর আদালত।

রায় ঘোষণার প্রাক্কালে বিজয়ের মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, বিজয়ের মাস চলছে। আর পাঁচদিন পরেই জাতি মহান বিজয় দিবস, তিনদিন পর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করবে। রায় প্রদানের প্রাক্কালে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। শ্রদ্ধা জানাই মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ মা-বোন এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি।

তিনি বলেন, পাশাপাশি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। আশা করছি তাদের মহান আত্মত্যাগের মহিমাকে সামনে রেখে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতি এগিয়ে যাবে। এরপর রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।

আদালতে প্রসিকিউটর ছিলেন মোখলেসুর রহমান বাদল। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। আসামিপক্ষের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম বলেন, এই রায়ে আসামি সংক্ষুব্ধ। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

রায় ঘোষণার পর প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, এই রায়ে প্রসিকিউশন পক্ষ সন্তুষ্ট।

এর আগে ১৭ অক্টোবর এ মামলায় শুনানি শেষে সিএভি (রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ) রাখেন। ওইদিনও আদালতে প্রসিকিউটর ছিলেন মোখলেসুর রহমান বাদল। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।

গত বছরের ২৭ মার্চ এ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরে একই বছরের ৮ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

অভিযোগ চূড়ান্তের পর তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজশাহীর বোয়ালিয়ায় ১০ জনকে হত্যা, দুইজনকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে নির্যাতন, ১২ থেকে ১৩টি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন দেওয়ার অপরাধ উঠে এসেছে তদন্তে। এসব অপরাধে এ আসামির বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ আনা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ পরবর্তীতে ‘ইসলামী ছাত্র শিবির’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৮৪ সালের পর থেকে রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৪ সালে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০১১ সালে অবসরে যান।

তদন্ত সংস্থা আরও জানায়, ১৯৮৪ সালের পর সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও আসামি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। ১৯৭৪ সালের ১০ আগস্ট তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে তিনি ছাড়া পান। গত বছরের ১ জানুয়ারি বিস্ফোরক আইনের মামলায় মতিহার থানার পুলিশ তাকে ফের গ্রেফতার করে। পরবর্তীকালে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে যে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হলো- ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টা থেকে পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত আসামি মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতান ওরফে টিপু রাজাকার স্থানীয় অন্যান্য রাজাকার ও পাক সেনারা বোয়ালিয়া থানার সাহেব বাজারের এক নং গদিতে (বর্তমানে জিরো পয়েন্ট) হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাবর মণ্ডলকে আটক করে। পরে তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত সেনা ক্যাম্পে নিয়ে দিনভর নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে মরদেহ মাটিচাপা দেয়।

১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর রাত আনুমানিক ২টায় এ আসামি, স্থানীয় রাজাকার ও ৪০ থেকে ৫০ পাক সেনা বোয়ালিয়া থানার তালাইমারী এলাকায় হামলা চালায়। এ হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা চাঁদ মিয়া, আজহার আলী শেখসহ ১১ জনকে আটক করে নির্যাতন চালায়। এসময় তারা তালাইমারী এলাকার ১২ থেকে ১৩টি বাড়ি লুট করে।

পরে আটক ১১ জনকে রাবির শহীদ শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্প ও টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে ৪ নভেম্বর মাঝরাতে ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments