রাজধানীতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাঁচ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে সমাবেশ করেছে। সমাবেশে মহিলা পরিষদের নেতারা প্রশ্ন রেখে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নারী নির্যাতনের কথা বলতে হচ্ছে কেন? কেন রাস্তায় দাঁড়াতে হবে? নারীরা ঘরে-বাইরে কোথাও আজ নিরাপদ নয় কেন? এসব প্রশ্নের জবাব রাষ্ট্রকে দিতে হবে।
ধানমন্ডির সোবহানবাগ মসজিদের পাশে আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় এক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। নারী ও শিশু নির্যাতন-ধর্ষণের ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাঁচটি দাবি জানায়। দাবিগুলো হলো দ্রুত বিচার করে ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করা, ধর্ষণ মামলায় আপস না করা, ধর্ষণের শিকার নারীকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে না দেওয়া, ধর্ষণের শিকার নারী ও কন্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যৌন সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যাকে দোষারোপ না করা।
কেন্দ্রীয় কমিটির লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক মাকসুদা আক্তার বলেন, ‘আমরা বারবার কেন রাস্তায় দাঁড়াই? করোনা টিকা প্রদানে নারী ও শিশুর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। নারী নির্যাতন সাধারণ মানুষকে যেমন প্রতিরোধ করতে হবে, তেমনি নারীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নারীবান্ধব প্রশাসন তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে সমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার কথা জানানো হয়। দেশের ৫৪টি জেলায় জাতীয় মহিলা পরিষদের কমিটির উদ্যোগে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সহসভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের আইনের শাসন কোথায়? একটা ঘটনার পর আরেকটা ঘটনা ঘটছে। চাপা পড়ে যায় নির্যাতনের ঘটনাগুলো। এই ঘটনাগুলোর মাস্টারমাইন্ড কারা, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। ধর্ষকদের কোনো অবস্থায় প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
কলাবাগানে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া স্কুলছাত্রীকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তাঁর এক সহপাঠী মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বলে, ‘প্রশাসন আমাদের সঠিক বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের কোনো দাবি পূরণ করা হচ্ছে না।’
সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘করোনা সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখানে নারীর অবদান উল্লেখ করা হচ্ছে না। সংকটে নারীরা সব সময় পুরুষের পাশাপাশি থাকে। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় আমাদের ধর্ষণ ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার এখনো হয় না। নির্যাতনের শিকার নারীকে আপস করতে বলা হয়। বিচারপ্রক্রিয়া প্রভাবশালীর ক্ষমতার কারণে প্রভাবিত হয়। এসব পরিস্থিতি প্রতিহত করতে হবে। ঘটনাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করে নারীর সব সাংবিধানিক অধিকার প্রদান করতে হবে।